কম দামে অস্ত্র সংগ্রহে কুষ্টিয়া সীমান্তে যান সুব্রত বাইন

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৫ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম
কম দামে অস্ত্র সংগ্রহে কুষ্টিয়া সীমান্তে যান সুব্রত বাইন
ছবি : সংগৃহীত

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে গত বছরের ৫ আগস্টের পর ইন্ডিয়া থেকে দেশে ঢোকেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। লক্ষ্য ছিল রাজধানীতে পুনরায় আধিপত্য বিস্তার এবং নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী পুনর্গঠন। এ লক্ষ্যে বাহিনীতে নতুন সদস্যও সংগ্রহ করেন তিনি। আবার বাহিনীকে শক্তিশালী করতে শুরু করেন অস্ত্র সংগ্রহের কাজ। তবে রাজধানীতে কালোবাজারে ভালো মানের অস্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য কুষ্টিয়া জেলায় অবস্থান করেন সুব্রত। তাঁর এ কাজে সহযোগিতা করেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ। 

অস্ত্র মামলায় সম্প্রতি সুব্রতর বিরুদ্ধে পুলিশের জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গত ৭ জুলাই রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র মামলায় এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম। অভিযোগপত্রভুক্ত মামলার আসামিরা হলেন সুব্রতবাইন ওরফে ফাতেহ আলী, তাঁর সহযোগী আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, এম এ এস শরীফ ও আরাফাত ইবনে নাসির। গত রবিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। মামলার অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সাক্ষী করা হয়েছে ১৩ জনকে। 

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুব্রত ২০-২৫ বছর ধরে ইন্ডিয়াতে অবস্থান করছিলেন। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তিনি দেশে ঢোকেন। এরপর ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তিনি তাঁর অনুসারীদের দ্বারা বাহিনী পুনর্গঠনের কাজে মনোনিবেশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সুব্রত শুরু করেন বাহিনীর জন্য নতুন সদস্য ও অস্ত্র সংগ্রহ। ঢাকায় কালোবাজারে ভালো মানের অস্ত্রের দাম বেশি বিধায় সুব্রত চলে যান কুষ্টিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে। সেখানে কম দামে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেন। ইতোমধ্যে অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের অনুগত মোল্লা মাসুদ তাঁর সঙ্গে কুষ্টিয়ায় যোগ দেন। সেখানে অবস্থানকালে গত ২৭ মে ভোরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। 

জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত ও মাসুদ জানান, তাদের সহযোগী এস এম শরীফের হাতিরঝিলের একটি বাড়িতে তারা নিয়মিত বৈঠক করতেন। সেখানে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলি, অপরাধ সংগঠনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রাখা আছে বলে তথ্য পায় পুলিশ। পরে হাতিরঝিল থানাধীন নতুন রাস্তা এলাকা থেকে ২৭ মে বিকেলে শরীফ ও আরেক আসামি আরাফাত ইবনে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন। এ ঘটনায় পরদিন অস্ত্র আইনে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন এসআই আসাদুজ্জামান। 

২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। সে সময় সুব্রত ও মাসুদ সন্ত্রাসী বাহিনী সেভেন স্টার গ্রুপ পরিচালনা করতেন। এই বাহিনী সে সময়ে খুন-ডাকাতিসহ নানা অপরাধের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। তাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণার পর সুব্রত ইন্ডিয়াতে পালিয়ে যান। 

হাতিরঝিল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দিয়েছেন।  

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারের সময় আসামিদের কাছ থেকে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে তদন্তের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অস্ত্রগুলো পরীক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসেছিল। সুব্রত বাইনের কাছে পাওয়া গুলিগুলো ছিল তাজা। বিদেশি পিস্তলগুলোর দাম অনেক বেশি ছিল। দেশে ঢোকার পর সুব্রতর লক্ষ্য ছিল অস্ত্রের দিকে। 

অভিযোগপত্র সম্পর্কে জানতে সুব্রত বাইনের আইনজীবী বাদল মিয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।