ছয় মাসে ২৭ জনকে হত্যা সাম্প্রদায়িকতার কারণে নয়: পুলিশ সদর দপ্তর

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৫ জুলাই ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
ছয় মাসে ২৭ জনকে হত্যা সাম্প্রদায়িকতার কারণে নয়: পুলিশ সদর দপ্তর
ছবি : সংগৃহীত

গত ৬ মাসে ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনা সাম্প্রদায়িকতার কারণে সংঘটিত হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এছাড়া গত ১১ মাসে ২৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, গত ১০ জুলাই বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে বিগত ৬ মাসে (জানুয়ারি/২৫-জুন/২৫) সর্বমোট ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনাসহ গত ১১ মাসে ২৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ উল্লিখিত ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে। ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনার মধ্যে ২২টি ঘটনায় নিয়মিত হত্যা মামলা এবং পাঁচটি ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের কারণের মধ্যে জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুটি (ভাতিজা কর্তৃক চাচাকে হত্যা, চাচাতো ভাইদের মধ্যে মারামারির ফলে একজন নিহত), আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত দুইজন (তন্মধ্যে মাদক ক্রয়- বিক্রয়ের টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে একজন), ডাকাতি/দস্যুতার ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৭ জন, সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য সন্দেহে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের গুলিতে একজন, তরমুজ ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে মারামারিতে একজন, গলায় ফাঁস নিয়ে তিনজনের আত্মহত্যা, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এমন ১১ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় (ভবঘুরে/মানসিকভাবে অসুস্থ নারীর সন্দেহজনক মৃত্যু, জুম চাষে গিয়ে খেয়াং নারী নিহত, তামাক ক্ষেত হতে পাতা কুড়াতে যাওয়া নারীর মরদেহ উদ্ধার, বাড়ির পাশ থেকে জখমহীন মরদেহ/অন্যান্য স্থান থেকে মরদেহ উদ্ধার ইত্যাদি) তদন্ত চলমান।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ১৫ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে এবং ১৮ জন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। কোনো হত্যাকাণ্ডই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা/সাম্প্রদায়িকতার কারণে সংঘটিত হয়নি বলে তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে যৌন হয়রানি/ধর্ষণ/গণধর্ষণ সংক্রান্ত মোট ২০টি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০টি ঘটনার মধ্যে ১৬টি ঘটনার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে এবং ২৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনটি ঘটনা সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।

রাজশাহীর তানোরে আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তের সঙ্গে পূর্ব থেকে বাদীনির পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল বলে জানা যায়।

পুলিশ জানায়, মাগুরার শ্রীপুর হরিনন্দীগ্রামে কিশোর কুমার রায়ের বাড়িতে ডাকাতির পর সহধর্মিণীকে গণধর্ষণের ঘটনাটিতে কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি এবং ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায়নি।

সংগঠনটি জানায়, সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত; ২০১০টি- যার মধ্যে ১৭৬৯টি সম্প্রদায়িক আক্রমণ এবং হামলার ঘটনা। বাংলাদেশ পুলিশ ১৭৬৯ ঘটনা যাচাই-বাছাই করে ৫৬টি জেলায় মোট ১৪৫৭টি ঘটনার সত্যতা পায়।

১৪৫৭ ঘটনার মধ্যে মোট ৬২টি ঘটনায় মামলা রুজু হয় এবং ৯৫১টি ঘটনায় জিডি দায়ের করা হয়। ৬২ ঘটনায় মোট ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের তদন্তে দেখা যায়, ১৭৬৯টি ঘটনার মধ্যে ১৪৫২টি ঘটনা (৮২.৮%) ৫ আগস্ট/২০২৪ এ সংগঠিত হয়। ১২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক বিরোধ সংক্রান্ত। ১৬১টি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ২ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত পূজা মণ্ডপ/উপাসনালয় সংক্রান্ত মোট ১২৭টি সহিংসতার ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ৬৬টি ঘটনায় মামলা এবং ৬১টি ঘটনায় জিডি লিপিবদ্ধ করা হয়। রুজুকৃত মামলায় মোট ৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মন্দির/পারিবারিক মন্দিরে চুরি, প্রতিমা/ মন্দির/পারিবারিক মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নি-সংযোগ, জমি দখল, উচ্ছেদ, উচ্ছেদের চেষ্টা ইত্যাদি সংক্রান্ত মোট ৬০টি ঘটনার অভিযোগ করা হয়। এসব ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মন্দির/পারিবারিক মন্দিরের মূর্তি/অলংকার/আসবাবপত্র/দান বাক্সের টাকা ইত্যাদি সংক্রান্ত বাংলাদেশ পুলিশ ২০টি চুরির ঘটনার সংবাদ পায়। ২০টি ঘটনায় ১৪টি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয় এবং ৫ ঘটনা জিডিতে লিপিবদ্ধ করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর আরও জানায়, প্রতিমা/মন্দির/পারিবারিক মন্দিরে ভাঙচুরের মোট ২৪টি ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় এবং এ সংক্রান্ত মোট ১৮টি মামলা ও চারটি ঘটনা জিডিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এসব মামলায় মোট ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১০ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে। একটি চুরির ঘটনায় এবং দুইটি ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এছাড়া চারটি অগ্নি-সংযোগের ঘটনার মধ্যে দুইটি অগ্নি-সংযোগের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়নি। চারটি ঘটনায় জমি ও সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা ছিল বলে জানা যায় তন্মধ্যে দুটি ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়।

ছয়টি জায়গা দখলের অভিযোগের সংবাদে তদন্তে প্রকৃতপক্ষে জায়গা দখলের তথ্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ জানায়, খিলক্ষেত থানার বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গার অস্থায়ী পূজা মণ্ডপটি মূলত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। বগুড়ায় শ্মশানঘাটের পিলার ঠিকাদার কর্তৃক ভেঙে ফেলার ঘটনায় প্রশাসনের উদ্যোগে পুনরায় শ্মশান ঘাট নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংঘটিত অন্যান্য ঘটনায় পরবর্তীতে সুনির্দিষ্টভাবে সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

তথ্য পাওয়া গেলে সুনির্দিষ্টভাবে ঘটনাগুলো বিস্তারিত জানানো হবে। সংঘটিত প্রত্যেকটি ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং সকল স্থাপনা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।