ফ্যসিজম থেকে টেলিকম খাতকে মুক্ত করতেই নতুন নীতিমালা করছে অন্তর্বর্তী সরকার


বিগত ১৫ বছরের ফ্যসিজম থেকে টেলিকম খাতকে মুক্ত করতেই নতুন নীতিমালা করছে অন্তর্বর্তী সরকার বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষ সহকারি ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
আজ রাজধানীর হলিডে ইন হোটেলে, টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ- টিআরএনবি আয়োজিত “টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতি সংস্কার” বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, প্রজন্মের দাবি পূরণে কানেক্টিভিটি থেকে জেনারেশন সার্ভিস ট্রান্সফরমেশনের জন্য নতুন পলিসি করা হচ্ছে। অনেক বেশি জঞ্জালের ওপর থেকে এই নীতিমালা করতে যাওয়ায় এটিকে অনকটা বিবরণ মূলক করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের কল্যাণে কারো কারো স্বার্থে আঘাত আসতে পারে। কেননা, আমরা নেটওয়ার্কের জঞ্জাল ছেটে ফেলবো। ফয়েজ জানান, নীতিমালাকে সমৃদ্ধ করতে যৌক্তিক পরামর্শগুলো বিবেচনা করা হবে। একইসাথে সরকারের ভালো উদ্যোগকেও স্বাগত জানানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেছেন, কোনো ঢালাও অভিযোগ নয়, আমি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলবো। অপারেটররা ৪০০ কোটি টাকা লভ্যাংশ করলেও তারা সন্তুষ্ট নন। আপনাদের দেশের স্বার্থ দেখা উচিত।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এই পলিসির উদ্দেশ্য হলো জেনারেশনাল ট্রান্সফরমেশন (প্রজন্মগত রূপান্তর) এবং আমরা এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি।
বিশেষ সহকারী আরও বলেন, পলিসিতে লাইসেন্সের সংখ্যা কতগুলো হবে তা নির্ভর করবে লাইসেন্স অবলিগেশন এন্ড কেপিআই পারফরমেন্সের উপর। তবে বিটিআরসি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারে কি পরিমাণ লাইসেন্স লাগবে বা কি পরিমাণ লাইসেন্স থাকলে অপটিমাল হয়। তবে এই লাইসেন্স সংখ্যার নাম করে নতুন বিনিয়োগকারীদের বাধা দেওয়া যাবে না। তাছাড়া টোল কালেক্টর হিসেবে যে লাইসেন্সগুলো বিগত সরকারের সময় দেয়া হয়েছিল সেগুলো কন্টিনিউ করা হবেনা। বিদেশি কোম্পানির দেশীয় প্রতিনিধিদের দেশের বৃহত্তম স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার আহ্বান জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান বাড়াতে হবে না হলে তারা গ্রাহক হারাবে। আমরা নেটওয়ার্ককে কানিকটিভিটি থেকে সার্ভিস ওরিয়েন্টেড করতে চাই পাশাপাশি লোয়ার ব্যান্ডের ফ্রিকোয়েন্সি অবমুক্ত করা এবং এক্সিটিং ইকোসিস্টেম কে রিফর্মের জন্য কাজ করছি ।
বিশেষ সহকারী জানান, নীতিমালাকে সমৃদ্ধ করতে যৌক্তিক পরামর্শগুলো বিবেচনা করা হবে। একইসাথে সরকারের ভালো উদ্যোগকেও স্বাগত জানানো উচিত বলেও তিনি মনে করেন । এক্সপ্রেক্ট্রাম প্রাইজকে রোলআউট কষ্ট হিসেবে পলিসিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, এর আগে এতো ডেমোক্রেটিক উপায়ে কোন পলিসি হয়নি। পলিসি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে সবার সাথে কথা বলেছি। নতুন লাইসেন্স নিয়ে যারা আসবে তারা আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে কাজ করবে। লাইসেন্স লিমিটেড হবেনা।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব: ) এমদাদ উল বারী বলেন, টেলিকম হচ্ছে রিয়েল টাইম সার্ভিস, এটা হুট করে পরিবর্তন করলে সমস্যা হবে তাই স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে সাসটেইনেবল পরিবর্তন করা হবে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের নিচে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। পলিসিতে মাইগ্রেশন প্ল্যান রয়েছে তাই লাইসেন্স বাতিল নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই। কোন লাইসেন্স বাদ হচ্ছেনা, এজন্য স্টেক হোল্ডারদের কোলাবরেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব ) জহিরুল ইসলাম বলেন, এই পলিসিতে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, দশের মানুষের মোট চাহিদা ৭.৫ টেরাবাইট। এর ৬৫-৭০ শতাংশ প্রয়োজন মেটায় আইএসপিরা। এজন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। কিন্তু মোবাইল অপারেটরদের ৩৫ শতাংশ বাজার শেয়ার থাকলেও তাদের কর দিতে হচ্ছে না। এই বৈষম্য দূর করা দরকার।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সভায় মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ জুলফিকার জানান, ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে টেলিকম অপারেটর। সাড়ে ৬ কোটি সোশ্যাল মিডিয়ায় সংযুক্ত। তারপরও দেশের ৯ কোটির মতো মানুষ এখনো নেটওয়ার্কে সংযুক্ত নন। তারা কোনো ডিজিটাল সেবা পাচ্ছেন না। প্রতিবছরই বাড়ছে পরিচালনা ব্যয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত টেলিকম নীতিমালায় বিদেশী বিনিয়োগে শতাংশ বেধে স্থানীয় পর্যায় ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ ও লক্ষ্য পূরণে সময় বেধে দেয়া রীতিমত ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
টিআরএনবির সভাপতি সমীর কুমার দে এর সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআরএনবি'র সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন-এমটব-এর প্রেসিডেন্ট ও গ্রামীণফোন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান, বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইওহান বুসে, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ, বাংলালিংক, গ্রামীণফোন ও রবির চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার যথাক্রমে তাইমুর রহমান, তানভীর মোহাম্মদ ও সাহেদ আলম, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ফাইবার এট হোমের চিফ ইনিফরমেশন অফিসার সুমন আহমেদ সাবিরসহ টেলিযোগাযো খাতের কর্তাব্যাক্তিরা।