বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে সহায়তা করবে যুক্তরাজ্যের শিল্প কৌশল: সারা কুক


বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেছেন, যুক্তরাজ্যের আধুনিক শিল্প কৌশল বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও বৃদ্ধি সহায়তা করবে।
নতুন কৌশল সম্পর্কে মঙ্গলবার (২৪ জুন) মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দশ বছরের পরিকল্পনায় যুক্তরাজ্যের আধুনিক শিল্প কৌশল হলো অবকাঠামো শক্তিশালী করা ও ব্যবসায়িক খরচ কমানো এবং নিয়ন্ত্রণ সহজ করা। কৌশলটি যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদারে সহায়তা করবে।’
২৩ জুন প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের আধুনিক শিল্প কৌশলে যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি এবং যুক্তরাজ্যকে ব্যবসায় শীর্ষস্থানীয় করে তুলতে একটি দশ বছরের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।
এতে নির্দিষ্ট খাতে সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেটি বাড়ার সর্বাধিক সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে এমন সংস্কার প্রবর্তন করা—যা সব ধরনের ব্যবসার জন্য এগিয়ে যাওয়াকে সহজ করে তুলবে।
আটটি খাতকে নিয়েই যুক্তরাজ্যের এই পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় দেশটির শক্তিশালী এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। খাতগুলো হলো- উন্নত উৎপাদন, ক্লিন এনার্জি ইন্ড্রাস্ট্রি, সৃজনশীল শিল্প, প্রতিরক্ষা, ডিজিটাল ও প্রযুক্তি, আর্থিক পরিষেবা, জীবন বিজ্ঞান এবং পেশাদার এবং ব্যবসায়িক পরিষেবা।
প্রতিটি প্রবৃদ্ধি ক্ষেত্রের নির্দিষ্ট ১০ বছরের পরিকল্পনা রয়েছে, যা বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে, প্রবৃদ্ধি সক্ষম করবে এবং উচ্চমানের ভালো বেতনের কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, এই শিল্প কৌশলটি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং অতীতের স্বল্পমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি ও অস্থায়ী সমাধান থেকে একটি স্পষ্ট বিরতি।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতার এই যুগে এটি যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা ও দিকনির্দেশনা দেবে—যা তাদের বিনিয়োগ, উদ্ভাবন এবং ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়তা করবে। ফলে পরিবর্তনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মানুষের পকেটে আরও টাকা আসবে।
সারা কুক বলেন, ‘এভাবেই আমরা যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যতকে শক্তিশালী করি। আমরা যে খাতগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছি—সেগুলোকে সমর্থন করে, আমাদের পেছনে থাকা বাধাগুলো সরিয়ে শ্রমজীবীমানুষের জন্য একটি কার্যকর ও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য একটি স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করে। আমাদের বার্তা স্পষ্ট—যুক্তরাজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।’
কৌশলের সাহসী কর্মপরিকল্পনায় যা রয়েছে-
২০২৭ সাল থেকে বৃদ্ধির খাত এবং মৌলিক শিল্পে বিদ্যুৎ ব্যবহারে নির্ভরশীল উৎপাদকদের জন্য বিদ্যুৎ খরচ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে। এর ফলে ইউরোপের অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির সঙ্গে খরচের পার্থক্য কমে আসবে।
ব্রিটিশ বিজনেস ব্যাংকের(বিবিবি) আর্থিক সক্ষমতা ২ হাজার ৫৬০ কোটি পাউন্ডে উন্নীত করে উদ্ভাবনী ব্যবসার জন্য বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য শত শত কোটি পাউন্ডের তহবিল উন্মুক্ত করা, বেসরকারি মূলধনে আরও কয়েশ’ কোটি পাউন্ড জমা করা। এর মধ্যে রয়েছে—শিল্প কৌশল খাতের জন্য অতিরিক্ত ৪০০ কোটি পাউন্ড, বেসরকারি মূলধনে আরও শতকোটি পাউন্ড জমা করা। মূলত, বিবিবি ভেঞ্চার ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে উচ্চ-প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাময় কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করবে। ব্যবসার জন্য নিয়ন্ত্রণের প্রশাসনিক খরচ ২৫ শতাংশ কমিয়ে ও নিয়ন্ত্রকের সংখ্যা কমিয়ে বোঝা কমানো।
২০২৯-৩০ সালের মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় প্রতি বছর ২ হাজার ২৬০ কোটি পাউন্ডে উন্নীত করা—যাতে আইএস-৮ জুড়ে উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। ব্যয় পর্যালোচনা অনুসারে এআই-এর জন্য ২০০ কোটি পাউন্ডেরও বেশি এবং আগামী ১০ বছরে উন্নত উৎপাদনের জন্য ২৮০ কোটি পাউন্ড থাকবে।
এটি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শত শত কোটি ডলারের বেশি লাভ করবে। নিয়ন্ত্রক পরিবর্তনগুলো দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প এবং জৈবপ্রযুক্তি এআই এবং চালকবিহীন যানবাহনের মতো উদ্ভাবনী পণ্যগুলোর পথকে আরও প্রশস্ত করবে।
আমাদের মূল খাতে ভিসা, অভিবাসন সংস্কার এবং নতুন গ্লোবাল ট্যালেন্ট টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা আকর্ষণ করা। টাস্কফোর্স ও ৫৪০ কোটি পাউন্ডের একটি গ্লোবাল ট্যালেন্ট ফান্ড শীর্ষ প্রতিভাদের যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরে সহায়তা করবে।
আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও শিল্প সহযোগিতা গভীরতর করতে জাপান এবং সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে করা চুক্তিগুলোর উপর ভিত্তি করে শিল্প কৌশল অংশীদারত্ব গড়ে তোলা।