আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট বিক্রি, আর্থিক অনিয়ম, যাত্রী হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকার কমলাপুরসহ আটটি বড় রেলস্টেশনে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ২৮ মে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এসব স্টেশনে একযোগে অভিযান শুরু করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। টিকিটের কালোবাজারি বন্ধে দুদক বিশেষ নজর দিয়েছে বলেও জানান আকতারুল ইসলাম।
কমলাপুর রেলস্টেশনের প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, জামালপুর, সিলেট ও দিনাজপুর রেলস্টেশনে এসব অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অনলাইনে টিকিটের জন্য হুড়োহুড়ি
কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘পশ্চিমাঞ্চলের যেসব যাত্রী আগামী ৫ জুন ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ২৬ মে সকাল ৮টায় অনলাইনে পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এ সময় প্রথম ৩০ মিনিটেই টিকিট কিনতে ২ কোটি ৯৭ লাখ হিট বা টিকিট কেনার চেষ্টা করা হয়।’
এর আগের দিন ২৫ মে দুপুর ২টায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। বিক্রি শুরুর প্রথম ৩০ মিনিটেই ১ কোটি ৯৪ লাখ হিট হয়। তারও আগে, সকাল ৮টায় রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রির সময় সর্বোচ্চ ২ কোটি ৭৬ লাখ হিট রেকর্ড হয় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ট্রেনে ঈদযাত্রা ঘিরে এবার সারা দেশে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৬৫টি টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার মধ্যে রবিবার (১ জুন) দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৬২ হাজার ২৫৮টি টিকিট।
আগামী ৫ জুন ঢাকা থেকে সারা দেশে যাতায়াতের জন্য ৩৩ হাজার ৯২৪টি টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য ২৪টি ট্রেনে ১৬ হাজার ৫৭৬ আসন এবং পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য ২১টি ট্রেনে ১৭ হাজার ৩৪৮ টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫৮১ টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া, ৪ জুনের জন্য ঢাকা থেকে সারা দেশে যাতায়াতের জন্য ৩৪ হাজার ২০টি টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য ২৪টি ট্রেনে ১৬ হাজার ৫৭৬টি আসন এবং পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১টি ট্রেনে ১৭ হাজার ৪৪৪টি টিকিট।
এবার শুধু ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মোট আসন সংখ্যা থাকছে ৩৩ হাজার ৩১৫টি। পাশাপাশি ২৩টি পূর্বাঞ্চল এবং ২০টি উত্তরাঞ্চলগামী ট্রেনের জন্য কমিউটার, মেইল ও লোকাল সার্ভিসে আরও ৪৭ হাজার টিকিট বরাদ্দ করা হয়েছে।
টিকিট বিক্রির গতি নিয়ে প্রশ্ন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মেসবাহউদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমরা শুনেছি হাজার হাজার টিকিট দুই মিনিটে শেষ হয়ে যায়। টিকিট দুই মিনিটে বিক্রি হতে পারে, যদি সেটি কোনো দ্রুততম সার্ভার হয়; কিন্তু এত সক্ষমতা-সম্পন্ন সার্ভার আমাদের দেশে আছে কি না, এটি একটি প্রশ্ন।’
দীর্ঘদিন ধরেই ছুটির সময় ট্রেনের টিকিট বিক্রি ঘিরে কালোবাজারির যে অভিযোগ রয়েছে, তার প্রভাবেই এমনটি হতে পারে বলে ধারণা এই শিক্ষকের।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিশেষজ্ঞরাও ড. মো. মেসবাহউদ্দিন সরকারের এই উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করে দেশের সার্ভারের এই দ্রুতগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানান, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকমের তথ্যমতে, তাদের সিস্টেম প্রতি পাঁচ মিনিটে ৩০ হাজার টিকিট বিক্রি করার সক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে যত হিটই আসুক, সিট তো নির্দিষ্ট। দাঁড়ানো টিকিটসহ বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার। হিট মানেই টিকিট পাওয়া যাবে, এমন নয়।’
কালোবাজারির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ৩০ এপ্রিল যোগদান করেছি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি বা কাউকে অবৈধ টিকিট বিক্রিতে জড়িত অবস্থায় ধরিনি। তবে এ ব্যাপারে আমাদের পর্যবেক্ষণ চলমান রয়েছে।’
এত দ্রুত টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় টিকিট পাওয়া নিয়ে ঈদে ঘরমুখী মানুষের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। এতে কর্তৃপক্ষের ওপরও স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার চাপ বাড়ছে।