কোরবানি: হাটগুলোতে জমে উঠছে পশু কেনাবেচা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০২ জুন ২০২৫, ১১:৪২ এএম
কোরবানি: হাটগুলোতে জমে উঠছে পশু কেনাবেচা

ঈদুল আজহার প্রস্তুতি জোরদার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় অস্থায়ী গবাদিপশুর হাট গড়ে উঠতে শুরু করেছে। জমে উঠছে পশু কেনা-বেচাও।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা ঢাকায় আসা শুরু করেছেন এবং হাটগুলোও দ্রুত কোরবানির পশুতে ভরে উঠছে। এরইমধ্যে ব্যাপক পশু কেনা-বেচার মৌসুম শুরু হচ্ছে ঢাকায়।

স্থানীয়ভাবে যেগুলোকে ‘কোরবানি হাট’ বলা হয়, সেগুলো প্রতি বছর ঈদুল আজহা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে বসে, যাতে পর্যাপ্ত পশুর চাহিদা মেটানো যায়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধানে সরকারি হাটগুলো সাধারণত ঈদের দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে বসতে থাকে।

এই বছর, মে মাসের শেষ সপ্তাহে কার্যক্রম শুরু হয়, যখন মফস্বল এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা গরু, ছাগল এবং মহিষ নিয়ে আসেন। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী দেশ ভারতের ও নেপালের কিছু পশুও এসেছে। কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে এই সংখ্যাটা সীমিত।


২০২৫ সালে, ঢাকা শহরে ১৮টি সরকারি গবাদিপশুর হাট বসেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে, গাবতলী—শহরের একমাত্র স্থায়ী হাট, সাথে সাদেক হোসেন খোকা প্লে-গ্রাউন্ড, ধোলাইখাল, বাসিলা, কমরাঙ্গীরচর, ইস্টার্ন হাউজিং, মিরপুর ও উত্তরা সেক্টর ১৫-এর মতো অস্থায়ী স্থানগুলো।

এছাড়াও কিছু এলাকায় অনুমোদনবিহীন ছোট ছোট হাট গড়ে উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন হাট পরিদর্শনে দেখা গেছে দ্রুত কাজ এগিয়ে চলছে। অধিকাংশ বাঁশের কাঠামো তৈরি হয়েছে, বিক্রেতারা ও কৃষি খামার মালিকেরা তাদের স্থান চিহ্নিত করেছেন সাইনবোর্ড দিয়ে।

শহরের দৃশ্যমান পরিবর্তন হচ্ছে, পশু বোঝাই পিকআপ-ট্রাক ব্যস্ত রাস্তায় চলাচল করছে এবং তৈরি হচ্ছে ত্রিপলের ছাউনিযুক্ত অস্থায়ী খাঁচা।

তবে ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছেন, ‘কয়েক বছর ধরে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এতে গরু পালনে ব্যয় বেড়েছে। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি।’

গাবতলী হাটের পাশ দিয়ে নিয়মিত অফিসে যান মিরপুরের বাসিন্দা জামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন অফিস যাত্রায় গাবতলীর পাশ দিয়ে যাই। বাজারটি এখনই বেশ ভিড়, দাম খুব বেশি। লোকজন পছন্দের পশু কিনতে দরকষাকষি করছেন।’

এ বছর খরচ বেড়ে যাওয়া নিয়ে কথা বলেন পাবনা থেকে এক পশু ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, পরিবহন খরচ বেড়েছে। জ্বালানি দাম ও টোলের কারণে আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতারা চমক আশা করেন, কিন্তু আমাদের অনেক খরচ হয়েছে।

দনিয়া কলেজ মার্কেটে ফরিদপুর থেকে আসা আব্বাস আলী তার ছয়টি বলদ নিয়ে বললেন, ‘মানুষ দামাদামি করছেন। কিন্তু বিক্রি কম হচ্ছে। শুরুতে অবশ্য বিক্রি কম হওয়ারই কথা।’

এ সময়ে পশুখাদ্য বেড়ে যাওয়া ও পরিবহন খরচের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা

হাট এলাকায় সুষ্ঠু কার্যক্রম নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনগুলো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, পরিচ্ছন্ন পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মোবাইল পশুচিকিৎসা সেবা, সিসিটিভি নজরদারি ও বিশেষ নিরাপত্তা টহল।

প্রতারণা ও চুরি প্রতিরোধে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাও চালু করা হচ্ছে। অনলাইনে গবাদিপশু বিক্রির প্ল্যাটফর্ম জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পশুর হাটের ভিড় এড়াতে ও লেনদেনের সুবিধার কারণে লোকজন অনলাইন মাধ্যমে পশু ক্রয় করছেন।

তবে কয়েকটি সমস্যা রয়ে গেছে। হাট এলাকা সংলগ্ন সড়কে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশুর বর্জ্যের কারণে স্যানিটেশন সমস্যা বাড়ছে। অনিয়মিত ও বেআইনি হাটগুলোর বিস্তার তত্ত্বাবধানে জটিলতা সৃষ্টি করছে, আবার চাহিদা ও সরবরাহে ওঠানামা দামেও প্রভাব ফেলছে।

তবুও কোরবানির উৎসাহ কমেনি। গবাদিপশুর হাট এখন পুরো গতিতে চলছে। যার মধ্য দিয়ে ঢাকা শহরে এক দুর্দান্ত ব্যবসায়িক মৌসুম শুরু হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা সুরক্ষিত ও সফল মৌসুমের প্রত্যাশায় রয়েছেন, যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিলন ঘটছে।


লেনদেনের জন্য ব্যাংকের সময় বাড়ল

কোরবানি মৌসুমে আর্থিক লেনদেনের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে হাট সংলগ্ন ব্যাংক শাখাগুলোকে ৩ জুন থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। অস্থায়ী ব্যাংক বুথও গড়ে তোলা হচ্ছে বাজারে, যেখানে নগদ জমা, উত্তোলন ও হিসাব খোলার সেবা প্রদান করা হবে।

আবহাওয়ার সতর্কতা

জুনের প্রথমার্ধে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় সিটি কর্পোরেশনগুলো হাট এলাকায় দ্রুত নর্দমা ব্যবস্থা বাড়াচ্ছে। কুষ্টিয়া থেকে আসা কামরুল হালকা রসিকতা করে বলেন, ‘ঈদের আগে বেশি বৃষ্টি হলে হাটগুলোতে কাদা মেলা হবে—শান্তিতে পশু কেনাবেচা সম্ভব হবে না।’

তবুও ঢাকা দৃঢ়সংকল্পে এগিয়ে চলছে। পশুর হাট কেবল বাণিজ্যের উৎস নয়, আস্থা, ধৈর্য্য ও উৎসর্গের স্মারক হিসেবে রয়ে গেছে।