বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকার সড়ক, ভোগান্তি চরমে


বৈরী আবহাওয়ার কারণে সকাল থেকে হওয়া বৃষ্টি গড়িয়েছে সন্ধ্যা অবধি। বৃষ্টির জোর কিছুটা কমলেও এরইমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মূল সড়ক পানিতে ডুবে গেছে, বড় ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরে ফেরা মানুষ।
সরেজমিনে রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ, শাহজাহানপুর, বাসাবো, মাদারটেক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার মূল সড়কে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। মাথায় ছাতা চাপিয়ে জুতা হাতে নিয়ে রীতিমতো কসরত করে ঘরে ফিরতে হচ্ছে পথচারীদের।
অনেক এলাকায় শুধু রাস্তা না দোকানপাটেও পানি ঢুকেছে, ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। মৌচাক এলাকার বিরিয়ানির দোকানি হাসমত বিকাল থেকে দোকানের পানি সেচছেন। বলেন, দোকানের চেয়ার-টেবিল পানিতে ডুবে গেছে। নিজেরই দোকানে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে, মানুষ বসা তো দূরের কথা।
স্কুল ফেরত শিক্ষার্থী নুসাইবা রহমান বলেন, ‘জুতা খুলে হাতে নিয়ে এই ময়লা পানি পেরিয়ে বাসায় যেতে হচ্ছে। রাস্তার এখানে সেখানে খানাখন্দ। কখন কোন বিপদ ঘটে সেই ভয়ে আছি।’
বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কম। গণপরিবহন, রিকশা, সিএনজি এবং রাইড শেয়ারিং এর বাইক না থাকায় যাদের বাসা দূরে তাদের ঘরে ফেরা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
এমনই একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মোত্তাসিন হোসেন বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং অ্যাপ খুঁজে দেখলাম আশপাশে কোনো বাইক নেই। বের হয়ে দেখছি রাস্তায় নেই রিকশা-সিএনজি। বিশেষ করে যে-সব এলাকায় পানি জমেছে সেখানে পরিবহন পাওয়া দুষ্কর।’
এদিকে রাস্তায় পরিমিত বাস না থাকায় এবং অনেকক্ষণ পর পর এক একটি বাস আসায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ঘরে ফেরা মানুষ। নারী এবং শিশুদের জন্য বাসে করে ঘরে ফেরা এক রকমের অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী হুমায়রা আক্তার বলেন, ‘এই নিয়ে চারটা বাস মিস করেছি। বাস যে কয়টা এসেছে একেবারে মানুষে ঠাসা। বাসার দরজার সামনেই তিন-চারজন করে ঝুলছেন। মহিলা মানুষ হয়ে বাসে ঝুলে ঘরে ফেরার সাধ্য নেই।’
পথচারীদের অভিযোগ বৃষ্টির কারণে রিকশাভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়েছে। মালিবাগ থেকে বাড্ডার ভাড়া যেখানে ৮০-১০০ টাকা সেখানে রিকশাচালকরা ভাড়া চাচ্ছেন ১৮০-২০০ টাকা করে। আবার স্বল্প দূরত্বেও সিএনজি ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা।
কারণ জানতে চাইলে রিকশাচালক আরিফ বলেন, ‘সকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজছি। রাতে জ্বর আসলে তিন চারদিন ঘরেই থাকতে হবে। তাই আজকে বাড়তি ভাড়া তুলে রাখতে হচ্ছে।’
অটোরিকশাচালক সামাদ বলেন, ‘এ নিয়ে দুবার পানিতে মটোর ভিজে রিকশা নষ্ট হয়ে গেছে। মটোর ঠিক করে আবার রিকশা চালাতে হচ্ছে। বৃষ্টির দিন মানেই বাড়তি খরচ, তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া নিতে হয়।’
রাজধানীর অনেক জায়গায় পানি পারাপারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ভ্যানগাড়ি। পানিতে ডুবে যাওয়া সড়ক পার করে দেয়ার চুক্তিতে দূরত্ব অনুযায়ী তাদের দিতে হচ্ছে ১০-৩০ টাকা।
ভোগান্তিতে পড়া রাজধানীবাসী অভিযোগ জানিয়ে বলেন, সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি হলে যেখানে ড্রেনে পানি চলে যাওয়ার কথা, সেখানে উলটো ড্রেন উপচে সড়কে পানি ওঠে।
এনজিও কর্মী মাসুম বলেন, সিটি করপোরেশন সবসময়ই বলে তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে। কিন্তু বৃষ্টি হলেই টের পাওয়া যায় তাদের কাজের অগ্রগতি কতখানি। বৃষ্টি থামলেও মূল সড়ক থেকে পানি নামতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ঘূর্ণিঝড়ের কোনো আশঙ্কা নেই। তবে অতিভারি বর্ষণের আশঙ্কা এখনো রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।