সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে না পারলে অপরাধবোধ করব: অধ্যাপক ইউনূস

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৫ মে ২০২৫, ১১:৩২ পিএম
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে না পারলে অপরাধবোধ করব: অধ্যাপক ইউনূস

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে না পারলে অপরাধবোধ করবেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন, তারা এখন যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একসঙ্গে বসে সাহস পেয়েছি। আমরা যদি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে না পারি—তবে আমিও অপরাধবোধ করব।’

রবিবার (২৫ মে) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দুটি পৃথক বৈঠকের পর প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য উদ্ধৃত করে এসব কথা বলেন।

রবিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সকল প্রচেষ্টা চলছে।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর এবং আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাদের বলেছেন, ভারতীয় আধিপত্যের কারণে দেশ এক বিরাট সংকটের মধ্যে রয়েছে।

মান্না বলেন, ‘এর জন্য প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বাস করেন যে, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রেস সচিব আলম আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূস রাজনৈতিক নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি এই পদে থাকা পর্যন্ত দেশের স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে—এমন কিছু হতে দেবেন না।

রাজনৈতিক ঐকমত্যের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের অবশ্যই বিভাজন দূর করতে হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন এবং তার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

নির্বাচনী রোডম্যাপ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে তিনি আগামী বছরের ৩০ জুন পার করবেন না। ‘আপনাদের তার উপর আস্থা রাখতে হবে।’ বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি তিনি এক কথার মানুষ।’

এর আগে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ এবং মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ রাজনৈতিক নেতাদের একটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সংস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রাজনৈতিক নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জুসহ অন্যান্যরা এতে যোগ দেন।

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানসহ তিনজন উপদেষ্টাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

দ্বিতীয় পর্যায়ে, মাওলানা সাদিকুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আহমেদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, নুরুল হক নূর, মাওলানা মুসা বিন ইজহার এবং মুফতি মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন রাজী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।

এরআগে গতকাল শনিবার, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা পৃথকভাবে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস শনিবার পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে জোর দিয়ে বলেন যে সরকার আগামী বছরের জুনের পরে এগোবে না।

শনিবারের বৈঠকের পর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস তার কথায় অটল। তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়েছিলেন। তিনি এর বাইরে যাবেন না।’ পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে প্রধান উপদেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলে জানান তিনি।

আলম আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করার সময় একই কথা জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বারবার এই ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কথা উল্লেখ করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে, প্রধান উপদেষ্টা তার কথা রাখবেন।

আরও চাপ দেওয়া হলে, আলম বলেন যে ৩০ জুন একটি নির্দিষ্ট তারিখ এবং প্রধান উপদেষ্টা এর বাইরে যাবেন না।

আলম বলেন, রাজনৈতিক নেতারা তার (প্রধান উপদেষ্টার) নেতৃত্বের প্রতি তাদের আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং শনিবার তিনটি বৈঠকই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।