বিটিভিকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে মানববন্ধন


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকাল ১ বছর অতিবাহিত হলেও হাসিনার আস্থাভাজনদের ভয়াল ছোবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বিটিভি। অভিযোগ উঠেছে বিটিভিতে আওয়ামী পুনর্বাসনে ব্যস্ত সময় পার করছেন এক সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে চাকুরিচ্যুত বর্তমান চুক্তিভিত্তিক মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র হত্যায় মিডিয়া কুশীলবদের অন্যতম উপ -মহাপরিচাক সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তার সহযোগী মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও উপকেন্দ্রে বদলি মাধ্যমে জুলাই হত্যার দায় শেষ করার ষড়যন্ত্রে মেতে রয়েছেন আওয়ামী সিন্ডিকেট। আন্দোলন চলাকালে হাছান মাহমুদের টাকার উৎস ছাত্রলীগ নেতা বিটিভির প্রকৌশলী মনিরুল ইসলামও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বিটিভিতে। ছাত্রদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারে সেসময় বিটিভিতে গঠিত কমিটির প্রধান শামছুল আলমকে উল্টো প্রমোশন দিয়ে বার্তা শাখার নির্বাহী প্রযোজক ও বেআইনী ভাবে প্রোগ্রাম ম্যানেজার বানানো হয়। শুধু তাই নয় প্রেস সচিবের নাম ভাঙিয়ে বিটিভির পক্ষ থেকে যুক্ত করা হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। জুলাই আন্দোলনে বিটিভিতে হামলাকারী হিসেবে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনিসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাকারী তৎকালীন জিএম মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধেও নেওয়া হয়নি শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা।
আর তাই ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সমমনা ৯ টি সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো : মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায়- ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন এর সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার এর সভাপতিত্বে : বক্তব্য রাখেন - ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রধান ও দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন এর সভাপতি ও বিএনপি নেতা এম রফিকুল ইসলাম রিপন, মানবাধিকার সংগঠক ও ন্যাশনাল লেবার পার্টির দলীয় মুখপাত্র মো: শফিকুল ইসলাম। ডিইউজে সদস্য সাংবাদিক তাজুল ইসলাম।
এছাড়াও উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা ও বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকির হোসেন। ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন এর সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ স্বপ্নীল সরকার,। সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন আরিয়ান। সদস্য - সুহিল ইরফান কৌশিক, সদস্য ইমরান আহমেদ চৌধুরী, সদস্য শিহাব উদ্দীন সরকার, সদস্য তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘জুলাই গণহত্যায় বিটিভির কুশীলব’-দের একজনকেও গ্রেপ্তার, বরখাস্ত, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, বাধ্যতামূলক অবসর কিংবা সামান্যতম বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। বরং জুলাই গণহত্যায় প্রমাণিত বিটিভির অন্যতম কুশীলব উপমহাপরিচালক (বার্তা ও অনুষ্ঠান) ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ, তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব) মাহফুজা আক্তার, ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অর্থ যোগানদাতা সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (চলতি দায়িত্ব) ছাত্রলীগ নেতা মো: মনিরুল ইসলাম এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গঠিত প্রচার-প্রচারণা কমিটির প্রধান-নির্বাহী প্রযোজক (বার্তা) শামছুল আলমদের সুপরিকল্পিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে পূর্বের মত ফ্যাসিবাদী রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে দুর্নীতি, লুটপাট এবং তথ্য পাচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একইসাথে আওয়ামী আশীর্বাদপুষ্ট ও বিশেষ সুবিধাভোগী বিটিভির তৎকালীন মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধেও এখন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিটিভি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এরূপ রহস্যজনক ভূমিকায় শিল্পী, কলাকুশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণহত্যায় আহত-নিহতদের পরিবারসহ জুলাই-আন্দোলনকারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
মানববন্ধন থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, অবিলম্বে গণহত্যায় বিটিভির কুশীলবদের গ্রেপ্তার ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন , ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও তার আস্থাভাজন কর্মকর্তারা এখনো বিটিভিতে বহাল রয়েছেন। হাসিনাস ম্যান দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মহসিনের প্রভাবে তার স্ত্রী তাসমিনা আহমেদ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে বার্তা শাখার শামছুল আলম এখনো প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন পুরো বিটিভি জুড়ে । তিনি বলেন , বিটিভিতে আওয়ামী পুনর্বাসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন বর্তমান সময়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম। তার নির্দেশনায় বার্তা বিভাগে ছাত্রলীগ কর্মীকে সংবাদ উপস্থাপিকা বানানো, বিশেষ ক্যাটাগরীর শিল্পীদের বাদ দিয়ে খ ও গ ক্যাটাগরির শিল্পীদের দিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান নির্মাণের নির্দেশ, নতুন কুঁড়িকে বিতর্কিত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের আশ্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি নিধন কর্মসূচিও এগিয়ে নিচ্ছেন বর্তমান ডিজি।