এয়ার পিউরিফায়ার: প্রয়োজনীয়তা, দাম, জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ও নতুন মডেল
বাতাসের নিম্ন মানের জন্য জনবহুল ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় প্রায় সময়ই র্যাঙ্কিয়ে থাকে। অস্বাস্থ্যকর এই বাতাসের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উপক্রম ঘটে বিভিন্ন রোগব্যাধির। এই বায়ু দূষণ থেকে ঘরকে নিরাপদে রাখতে প্রযুক্তির সব থেকে সময়োপযোগী অনুদানটি হচ্ছে এয়ার পিউরিফায়ার। নতুন বছরে ইলেক্ট্রনিক বাজারে এগুলোর চলমান কিছু ব্র্যান্ড ও তাদের ফিচার নিয়েই আজকের নিবন্ধ। চলুন, তার পূর্বে এই আধুনিক ডিভাইসের সুবিধা এবং কেনার ক্ষেত্রে যাচাইয়ের কয়েকটি মানদণ্ডের বিশ্লেষণ দিয়ে শুরু করা যাক।
এয়ার পিউরিফায়ারের সুবিধা
শহরের বাতাস যেভাবে ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে, সেখানে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ঘর নিতান্ত অবধারিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় বাসা-বাড়ির বাতাস পরিশোধনের সবচেয়ে অপরিহার্য কাজটি করে এয়ার পিউরিফায়ার। ডিভাইসটির প্রধানত বাতাসে থাকা বিভিন্ন ধরণের দূষিত পদার্থকে ধ্বংস করে। আর এরই সূত্র ধরে পরবর্তীতে আসে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতাগুলো।
উদ্বায়ী জৈব যৌগ, ধোঁয়া এবং রাসায়নিক ধোঁয়ার মতো নানা ধরণের ক্ষতিকারক পদার্থ ঘরের ভেতরে থাকতে পারে। এয়ার পিউরিফায়ারের অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ফিল্টার এই দূষকগুলোকে নির্মূল করে। কোনো কোনো ডিভাইসে ইউভি (আল্ট্রাভায়োলেট)-সি লাইট বা আয়োনাইজার এর মতো উন্নত প্রযুক্তি থাকে। এটি বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দূর করার জন্য পুরো ঘরকে রীতিমত দূর্গে পরিণত করে।
বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করা বাতাসে প্রায়ই ধুলো, পরাগ এবং পশুপাখির পশমের মতো অ্যালার্জেন থাকে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
অনেক পিউরিফায়ারে এইচইপিএ (হাই এফিশিয়েন্সি পার্টিকুলেট এয়ার) বা হেপা ফিল্টার থাকে। এই ফিল্টারে যাবতীয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা ধরা পড়ে বিধায় অ্যালার্জি এবং হাঁপানির আক্রমণের ঝুঁকি থাকে না। এভাবে ডিভাইসটি পরিষ্কার বায়ুপ্রবাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা করে।
এয়ার পিউরিফায়ার কেনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি
কারিগরি দিক থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসটির বৈশিষ্ট্যগত বিষয় রয়েছে, যেগুলো উপরোক্ত সুবিধাগুলোর শতভাগ নিশ্চিত করে। ক্রয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পূর্বে সেই দিকগুলো সুক্ষ্মভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। এই নিরীক্ষণটি সম্পন্ন করা যেতে পারে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিতকরণের মাধ্যমেঃ
কভারেজ এলাকা এবং সিএডিআর
এয়ার পিউরিফায়ার কেনার পূর্বপরিকল্পনায় প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হবে ঘরের পরিসর। ডিভাইসটি পুরো ঘরের বাতাস কার্যকরভাবে পরিষ্কার করতে পারবে কিনা তার জন্য এই স্থিতিমাপটি প্রয়োজন। আর এখানেই আসে সিএডিআর বা ক্লিন এয়ার ডেলিভারি দরের অনুষঙ্গ। এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট আবদ্ধ স্থানে ডিভাইসের বাতাস পরিষ্কার করার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। কক্ষের আকার এবং সিএডিআর-এর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা মানেই বায়ু পরিশোধনে অকার্যকারিতা, সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও অর্থ দুটোরই অপচয়।
ফিল্টার প্রযুক্তি
পিউরিফায়ারের ফিল্টার সিস্টেম বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। যেমন হেপা, অ্যাক্টিভেটেড কার্বন, এবং আয়োনাইজার। প্রতিটিরই রয়েছে পৃথক উদ্দেশ্য এবং বাতাসের দূষক দূরীকরণের নিজস্ব পদ্ধতি।
হেপা ফিল্টার ব্যাপনের মাধ্যমে অ্যালার্জেন ও ছোট কণাগুলো আটকায়, আর সক্রিয় কার্বন গন্ধ ও ক্ষতিকারক গ্যাস দূর করে। আয়োনাইজার জমাকৃত বিদ্যুতের চার্জ দিয়ে পশুপাখির পশম ও উদ্ভিজ্জ পরাগকে আটকে ফেলে।
আওয়াজের মাত্রা এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের কার্যকারিতা
অপারেশন মুডে থাকার সময় ডিভাইসের আওয়াজ প্রায়শই দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে মাস শেষে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের চাপ বিড়ম্বনার কারণ হয়। আর পুরো বিনিয়োগটাই বৃথা হয় যখন দেখা যায় যে, এত বিল জমার পরেও বায়ু দূষণমুক্ত হচ্ছে না। তাই কম ডেসিবেল রেটিং এবং এনার্জি-এফিশিয়েন্ট ডিজাইনের মডেলের দিকে নজর দেওয়া উচিত। এগুলো একই সাথে নয়েজ ফ্রি এবং সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।
উন্নত প্রযুক্তি
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিউরিফায়ারগুলো নিত্য নতুন গ্যাজেটে সজ্জিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মোবাইল অ্যাপ সংযোগ, রিয়েল-টাইম এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং এবং পরিবর্তনযোগ্য মুড। এই উদ্ভাবনাগুলো ডিভাইসের সাধারণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে আরও উপযোগী করে তোলে। বিশেষত বাতাসের মান যত কমে এই প্রযুক্তিগুলোরও প্রয়োজনীয়তা ততটাই টের পাওয়া যায়। তাছাড়া এর সঙ্গে গ্রাহক কত সহজে ডিভাইসটি চালাতে পারছেন সে বিষয়টিও জড়িত। বলাই বাহুল্য যে, এরকম অতিরিক্ত সংযুক্তির ধারাবাহিকতায় ডিভাইসের দামটাও বাড়তে থাকে।
রক্ষণাবেক্ষণ এবং ফিল্টার প্রতিস্থাপন খরচ
কেনার সময় এককালীন মূল্য থেকে পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণে বেশি খরচ চলে যাচ্ছে কিনা তার হিসাব করাটা জরুরি। বিভিন্ন সময়ে ডিভাইসের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বিশেষ করে ফিল্টার প্রতিস্থাপনের দরকার পড়ে। অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ও এইচইপিএ ফিল্টার ঘন ঘন প্রতিস্থাপন করতে হয়, অপরদিকে প্রি-ফিল্টার ও আয়োনাইজার ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এই পর্যালোচনা সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি যৌক্তিক ও বাজেট উপযোগী সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বর্তমান বাজারের সেরা ১০টি এয়ার পিউরিফায়ার
অনলাইনে ইলেক্ট্রনিক পণ্যের বিপণীগুলো উপরোল্লিখিত সুবিধা ও বৈশিষ্ট্যগুলো তুলনা করার জন্য যথেষ্ট সহায়ক। তড়িৎ পর্যালোচনার নিমিত্তে নতুন বছরের জন্য বাজারের প্রসিদ্ধ ১০টি ব্র্যান্ডের ডিভাইসের দামসহ ফিচার দেওয়া হলো-
মোমেক্স এপি১০ | ৯ হাজার ৫০০ টাকা
আকার ও ডিজাইনের দিক থেকে বেশ কমপ্যাক্ট অথচ যথেষ্ট শক্তিশালী মোমেক্সের এই ডিভাইস। এর বিল্ট-ইন ইউভি-সি ৯৯ শতাংশ বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া দূর করতে পারে। ফিল্টারের হেপা অংশটি এইচ১৩ গ্রেডের, তাই এটি পিএম (পার্টিকুলেট ম্যাটার)-২ দশমিক ৫ কণাগুলোকে ধরাশায়ী করতে পারে ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। এই পিএমগুলো হচ্ছে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটারের অণুজীব যা ধোয়া বা বাতাসের মধ্যে থাকে।
ফিল্টারের সক্রিয় কার্বনের অংশটি উদ্বায়ী জৈব যৌগগুলোকে আকৃষ্ট করে। এভাবে পিউরিফায়ারটি কার্যকরভাবে ১০ বর্গ মিটার পর্যন্ত জায়গার বাতাসকে বিশুদ্ধ করে। এছাড়াও বায়ু দূষণ হ্রাসে অংশ নেয় ডিভাইস থেকে নির্গত ৮০ লক্ষ ঋণাত্মক আধান। এলইডি ডিসপ্লের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, বাতাসের গতি, আয়ন স্থিতি এবং বায়ুর গুণমান সম্পর্কে রিয়েল-টাইম আপডেট দেওয়া হয়। ব্যাটারি ১০ হাজার এমএএইচ (মিলি-অ্যাম্পিয়ার-আওয়ার)-এর, যেটি ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত অপারেশন দিতে সক্ষম।
বেকো পি৬ এটিপি৬১০০আই | ৯ হাজার ৯০০ টাকা
এই এয়ার পিউরিফায়ারটিতে ৩৬০-ডিগ্রি বাতাস প্রবাহের জন্য রয়েছে চারটি ভিন্ন স্পিড সেটিংস। আকারে ছোট হলেও মডেলটিতে ৩-পর্যায়ের ফিল্টার ব্যবস্থার স্থান সঙ্কুলান হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রি-ফিল্টার, ১৩ গ্রেডের হেপা ফিল্টার, এবং অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ফিল্টার। তাই রয়েছে ক্ষুদ্র থেকে বড় কণাসহ গন্ধ এবং উদ্বায়ী জৈব যৌগ সবই দূরীভূত হয়। ডাস্ট সেন্সর ও আয়োনাইজারের সমন্বয় যথেষ্ট পরিমাণে অ্যালার্জেন হ্রাস করতে পারে।
প্রতি ঘণ্টায় ২০৪ কিউবিক মিটার সিএডিআর সম্পন্ন ডিভাইসটির ১০ বর্গ মিটারের জায়গা কভার করতে ৮ মিনিট এবং ৩০ বর্গ মিটারের জন্য ২৭ মিনিট লাগে। অপারেশনের সময় এর সর্বোচ্চ নয়েজ লেভেল উঠতে পারে সর্বোচ্চ ৫৫ ডিবিএ (ডেসিবল এ্যাডজাস্টেড)। বেকো থেকে পিউরিফায়ারটির জন্য ১২-মাসের ব্র্যান্ড ওয়ারেন্টি রয়েছে।
গ্রী জিসিএফ-৩৫০এএসএনএ | ১৬ হাজার ৫০০ টাকা
এই অত্যাধুনিক ডিভাইসের বিশেষত্ব হচ্ছে পিএম-২ দশমিক ৫-এর মতো আণুবীক্ষণিক কণা এবং ফর্মালডিহাইডের মতো গ্যাসীয় দূষক অপসারণ করা। এই অপারেশনের নেপথ্যে রয়েছে ঈগল উইং বায়োনিক প্রযুক্তি এবং একটি টার্বো ইনভার্টার মোটর। ফলে সমপর্যায়ের যেকোনো পিউরিফায়ার থেকে এর কার্যকারিতা বেশি থাকে। এই অপরসারণ কার্যক্রমকে দৃষ্টিগোচর করার জন্য রয়েছে একটি সেন্সর ও রিয়েল-টাইম ডিসপ্লে। অন-অফ টাচ লাইট বোতাম, তিন রঙের লাইটের মাধ্যমে বাতাসের গুণমান নির্দেশক এবং চাইল্ড লক ফাংশন ব্যবহারকারীদের কাছে এটিকে সাবলীল করে তুলেছে। পাঁচটি পরিবর্তনযোগ্য বায়ুপ্রবাহের স্পিড লেভেলের সঙ্গে আছে অতিরিক্ত তিনটি মুড- অটো, স্লিপিং এবং টার্বো।
রক্ষণাবেক্ষণের দিক থেকে এর বড় সুবিধা হচ্ছে যৌগিক ব্যারেল-টাইপ ফিল্টার। এ ধরণের ফিল্টার প্রতিস্থাপনের জন্য যথেষ্ট সহজ। খুচরা যন্ত্রাংশ এবং বিক্রয়োত্তর পরিষেবার জন্য ১ বছরের ওয়ারেন্টি আছে।
শাওমি স্মার্ট এয়ার পিউরিফায়ার ৪ লাইট | ২২ হাজার ৫০০ টাকা
স্মার্ট ও প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য বিশেষ করে স্মার্ট কন্ট্রোল সিস্টেমের জন্য সুপরিচিতি রয়েছে শাওমির। এই লাইট ভার্সনের পিউরিফায়ারটিতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই সাথে বায়ু পরিশোধনে উচ্চ-দক্ষতায়ও কোনো ঘাটতি রাখা হয়নি। ঘণ্টা প্রতি ৩৬০ কিউবিক মিটার সিএডিআরের ডিভাইসটি প্রতি মিনিটে ৬ হাজার লিটার পরিষ্কার বাতাস সরবরাহ করে। থ্রি-ইন-ওয়ান ফিল্টারেশন সিস্টেমটি ০ দশমিক ৩ মাইক্রোমিটারের মতো ছোট ছোট কণাকে ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ অপসারণ করে। এই কম্বো সিস্টেমের পরিচালনায় রয়েছে উচ্চ-মানের সক্রিয় কার্বন স্তর। পর্যাপ্ত জায়গা কভার করা এই ফিল্টার কমপক্ষে ১২ মাসের নিশ্চিন্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে। পারফরম্যান্সের অতিরিক্ত নিশ্চয়তা হিসেবে রয়েছে ৬-মাসের ওয়ারেন্টি।
প্যানাসনিক এফ-পিএক্সজে৩০এ | ২২ হাজার ৫০০ টাকা
থ্রিডি সার্কুলেশন এয়ারফ্লো দিয়ে সজ্জিত এই এয়ার পিউরিফায়ারের কভারেজ ক্ষমতা হলো সর্বোচ্চ ২১৫ বর্গফুট। মাঝারি কাঠামোতে জায়গা পেয়েছে একটি কম্পোজিট ফিল্টার, হাউস ডাস্ট ক্যাচার, এবং একটি ডিওডোরাইজিং ফিল্টার।
এর সুপার ন্যানো-টেকনোলজি ডিওডোরাইজিং ফিল্টার এবং গ্রিন টি ক্যাটিচিন সহ অ্যালার্জি-বাস্টার গন্ধ এবং অ্যালার্জেন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই প্রক্রিয়ার নেপথ্যে কাজ করে গন্ধ সেন্সর এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া এনজাইম। অপারেশনে সুবিধার জন্য এতে আছে অটো মুড এবং ৮-ঘণ্টা স্লিপিং মুড।
বিভিন্ন সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার্তে দেওয়া হয়েছে একটি ক্লিন সাইন ইন্ডিকেটর। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ডিভাইসটির জন্য রয়েছে ১ বছরের ওয়ারেন্টি।
শার্প এফপি-জেএম৪০ই-বি | ২৫ হাজার ৯০০ টাকা
বাতাস বিশুদ্ধকরণের পাশাপাশি শার্পের এই মডেলটিতে রয়েছে মশা নিধনের ক্ষমতা। এর রাসায়নিক-মুক্ত পাঁচ-পর্যায় বিশিষ্ট ব্যবস্থা অন্যান্য পরাগের পাশাপাশি মশাকেও আকৃষ্ট করে। এই ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি ইউভি লাইট এবং কালো বহিরাবরণ। এছাড়া, ডিভাইসের শক্তিশালী এয়ার সাকশনের কাছে মশা নিমেষেই ধরাশায়ী হয় এবং একটি আঠালো শীটে আটকা পড়ে।
আবদ্ধ স্থানে ৩০ বর্গ মিটার জুড়ে এই দ্বৈত কার্যক্রম চালাতে পারে ডিভাইসটি। এর হেপা ফিল্টারটি ০ দশমিক ০৩ মাইক্রনের মতো আণবীক্ষণিক অণুজীবগুলোকেও ধরতে পারে। এছাড়াও বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন, ভাইরাস, ও ব্যাকটেরিয়া নিষ্ক্রিয়করণের জন্য এর রয়েছে পরিপূরক প্লাজমাক্লাস্টার আয়ন প্রযুক্তি। এটি যেকোনো ফিল্টারের পরিপূরক এবং গন্ধহীন পরিবেশ তৈরিতেও সক্ষম।
সব মিলিয়ে ডুয়াল-ফাংশনের এই ডিভাইস ঘরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্য একটি আদর্শ উপায় হতে পারে।
স্মার্ট এয়ার এসএ৬০০ | ৩২ হাজার ৫০০ টাকা
সুপ্রশস্ত জায়গাগুলোকে উদ্দেশ্য করে ডিজাইনকৃত এই পিউরিফায়ার মাত্র ১৬ মিনিটে ৬০০ বর্গফুট এলাকার বাতাস পরিষ্কার করে। স্মার্ট এয়ার মডেলটির বিশেষত্ব হিসেবে রয়েছে এইচ১৩ গ্রেডের হেপা, প্রি-ফিল্টার, এবং সক্রিয় কার্বন ফিল্টার। তাই ক্ষুদ্র কণা, ক্ষতিকারক গ্যাস, অপ্রীতিকর গন্ধ, এবং পশুপাখির পশম কোনও কিছুই এর দুর্ভেদ্য বেষ্টনী অতিক্রম করতে পারে না। অপারেশনকালে আওয়াজের মাত্রা সর্বোচ্চ ৫২ দশমিক ৫ ডেসিবল-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। বাতাস বিশোধনের পুরো প্রক্রিয়াতে স্ট্যান্ডার্ড বক্স ফ্যানের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম বিদ্যুৎ শক্তি খরচ হয়। তাই প্রথমে খরচের ধাক্কা থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে এই মডেলটি খরচ বাঁচানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
স্যামসাং এএক্স৯০আর৭০৮০ডব্লিউডি/ইইউ | ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা
উন্নতমানের এই এয়ার ক্লিনারটির প্রধান ফিচারগুলো হচ্ছে হেপা এবং ডিওডোরাইজিং ফিল্টার সহ বহু-স্তর বিশিষ্ট পরিশোধন ব্যবস্থা। অনাকাঙ্ক্ষিত ধুলো এবং গন্ধকে শনাক্তের জন্য রয়েছে স্মার্ট সেন্সর। ৩-ওয়ে এয়ারফ্লো বায়ু সঞ্চালন বাড়াতে অংশ নেয়। এভাবে বাতাসে থাকা যাবতীয় দূষক দূরীকরণ অব্যাহত থাকে ৯০ বর্গমিটার পর্যন্ত।
ওয়াইফাইয়ের সংযুক্তি থাকায় বিরামহীন রিমোট কন্ট্রোলের সুবিধা রয়েছে, যেখানে কাজ করে ইউজার-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেসের ‘স্মার্টথিংস’ অ্যাপ। এছাড়াও ডিভাইসে বিভিন্ন সময় রিয়েল-টাইম আপডেটগুলো প্রদর্শন করা হয়।
নিরাপত্তামূলক বৈশিষ্ট্য হিসেবে রয়েছে অফ-টাইম সেটিং এবং চাইল্ড-কেয়ার লক। ৫৪ ডিবিএ সর্বোচ্চ নয়েজ লেভেল বিশিষ্ট পিউরিফায়ারটি দীর্ঘক্ষণ যাবৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে কর্মক্ষমতা অটুট রাখতে পারে।
হিটাচি ইপি-এনজেজি৭০জে | ৪৩ হাজার ৯০০ টাকা
নজরকাড়া ডিজাইনের এই ডিভাইসের বিশেষত্ব হচ্ছে প্রশস্ত এবং দ্রুত ধুলো সংগ্রহের ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ডিভাইসের বিপরীত দুই পাশে ১৩ বর্গ মিটার পর্যন্ত স্থানকে বায়ু দূষণমুক্ত হয়। অত্যাধুনিক পিউরিফায়ারটি ধুলো, ছাঁচ এবং সিডারের পরাগের মতো সূক্ষ্ম কণা আটকাতে পারদর্শী। তালিকার অন্যান্য পিউরিফায়ারগুলোর মতো এটিতেও আছে হেপা পরিস্রাবণ ব্যবস্থা।
১৫ ডিবিএ-এর নিচে নয়েজ লেভেল রাতের বেলা ডিভাইসের শান্ত অপারেশন নিশ্চিত করে। গ্রাহকদের কাছে নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে হিটাচির পক্ষ থেকে ১২-মাসের পরিষেবা এবং যন্ত্রাংশের ওয়ারেন্টি আছে।
ফিলিপস এসি২৮৮৭ | ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা
উচ্চ-পার্ফরম্যান্স এবং মাত্র ২০ দশমিক ৫ ডিবিএ নয়েজ লেভেলের স্লিপ মুডের এক অনন্য সংমিশ্রণ রয়েছে ফিলিপ্সের এই মডেলটিতে। এরাসেন্স প্রযুক্তির দৌলতে মডেলটি কার্যকরভাবে বাতাসে ভেসে বেড়ানো দূষক পরিমাপ এবং নির্মূল করতে পারে। একই সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণেও অংশ নেয়। এর ভিটাশিল্ড প্রযুক্তি প্রাকৃতিকভাবে ০ দশমিক ০২ মাইক্রনের কণার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এই ফিল্টার ব্যবস্থা নিয়ে ডিভাইসটি ৮৫১ বর্গফুট পর্যন্ত জায়গা কভার করতে পারে। এ সময় প্রতি ঘণ্টায় ৩৩৩ কিউবিক মিটার সিএডিআর-এ বিরামহীন বায়ুপ্রবাহ অব্যাহত রাখা হয়।
স্মার্ট প্রিসেটিং ডিসপ্লেতে পিএম ২ দশমিক ৫ সহ বিভিন্ন বায়ুবাহিত দূষণকারীর রিয়েল-টাইম পরিমাপ পাওয়া যায়। ওজোন গ্যাসমুক্ত রাখার মাধ্যমে বায়ু বিশোধনের সামগ্রিক প্রক্রিয়াসহ ডিভাইসটি নিজের সরঞ্জামাদির নিরাপত্তা ধরে রাখে।
শেষাংশ
এই ১০টি এয়ার পিউরিফায়ারের যেকোনোটি ঘরের বাতাসকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। তন্মধ্যে মশা ও কীটপতঙ্গ ধ্বংসের অতিরিক্ত সুবিধা দিবে শার্পের মডেলটি। বরাবরের মতো স্মার্ট কন্ট্রোলের দিক থেকে এগিয়ে থাকা শাওমিতে পাওয়া যাবে সেরা ফিল্ট্রেশন। একই ক্যাটাগরিতে থাকবে বেকো, কারণ এর আছে আধুনিক ফিল্টার ক্ষমতার আয়োনাইজার। স্যাম্সাং-এর বিশেষত্ব মাল্টি-লেয়ার সিস্টেমে এবং গ্রী ও মোমেক্স-এর নৈপুণ্য অ্যালার্জেন-মুক্তকরণে। বাতাসের উন্নত সঞ্চালনের জন্য প্যানাসনিক আর দুর্দান্ত সেন্সিং ক্ষমতা পেতে ফিলিপ্সের মডেলগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। যারা নয়েজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা অগ্রাধিকার দিতে পারেন ফিলিপ্স ও স্মার্ট এয়ার’কে।