বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে শারীরিক সম্পর্কের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর, অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২০ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৫ পিএম
বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে শারীরিক সম্পর্কের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর, অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এতে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে পরে প্রতারণা করার মতো অপরাধে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অনুমোদন করা হয়। বৈঠক শেষে বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, ‘কেবিনেট আজকে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের আইন উপদেষ্টা গত সপ্তাহে বিস্তারিত বলেছেন। উনার ব্রিফিংয়ের পরে আমরা অনেকগুলো উইমেন গ্রুপের মতামত নিয়েছি। সেগুলোকে অ্যাকমডেট করার (অধ্যাদেশে জায়গা দেওয়ার) যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। তার আলোকে আজকে প্রায় ঘণ্টাখানেক এই ল’টা (নিয়ে) ডিবেট (বিতর্ক) হয়েছিল, তারপর এ অ্যামেন্ডেন্টটা (অধ্যাদেশ) পাস হয়েছে।’

আগে প্রেমের সম্পর্ক থাকার সময় বিয়ের প্রতিশ্রুতি বা প্রতারণার মাধ্যমে কারও সঙ্গে যৌনকর্ম করলে তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে সে অনুযায়ী শাস্তির বিধান ছিল।

তবে অনুমোদিত খসড়া অনুযায়ী, বিষয়টি আর ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে না। এ ধরনের প্রতারণাকে আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে সাত বছর কারাদণ্ড।

এ বিষয়ে শফিকুল আলমের বক্তব্য, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যে রেপ কেসগুলো, সেই জায়গাটায়ও নতুন করে অনেকগুলো মেজার (ব্যবস্থা) নেওয়া হয়েছে। আগের ল-এ নতুন একটা সেকশন নিয়ে এসে সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর করা হয়েছে… কেবিনেট অবশেষে এটা আজকে পাস করেছে।’

এদিকে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে ধর্ষণের সংজ্ঞা সংশোধন করা হয়েছে এবং শিশু ধর্ষণ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, বিচারক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, মানবাধিকার সংস্থা, আইন বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের মতামত পর্যালোচনা করে আইন ও বিচার বিভাগ এই খসড়া প্রণয়ন ও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করে।

এটি ছাড়াও আজ (বৃহস্পতিবার) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আরও তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো—

১. সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ শতাংশের কম হলে টেন্ডার প্রস্তাব বাতিলের যে বিধান ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। আগের কাজের মূল্যায়নের জন্য যে ম্যাট্রিক্স ছিল, যেটি থাকার কারণে একই প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ পেত, সেটি বদলে নতুন সক্ষমতা ম্যাট্রিক্স করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কারণ হিসেবে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এতে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে। বর্তমানে ৬৫ শতাংশ কাজের দরপত্র বা টেন্ডার অনলাইনে হচ্ছে। সরকার এটিকে শতভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

২. পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্তরা আগে নিজ নামে নামজারি করতে পারতেন না। সেই অসুবিধা দূর করতে আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।

৩. চৈত্র সংক্রান্তিতে নির্বাহী আদেশে তিন পার্বত্য জেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাঁওতাল, গারো, খাসিয়া, জৈন্তাসহ সমতলের বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও এই ছুটির আওতায় থাকবে।