বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য লন্ডনে বার্ষিক গীতা যজ্ঞের আয়োজন

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ পিএম
বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য লন্ডনে বার্ষিক গীতা যজ্ঞের আয়োজন
ছবি: সংগৃহীত

৮ সেপ্টেম্বর, লন্ডনে বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা বার্ষিক গীতা যজ্ঞে একত্রিত হন। যুক্তরাজ্যের ভগবত গীতা গবেষণা ফাউন্ডেশন (বিজিআরএফ) এবং শ্রী শ্রী গীতাসংঘ বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় এই গীতা যজ্ঞটি আয়োজিত হয়। এবারের যজ্ঞের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল "বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতি," বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ, মহামারি, খরা, মানবতা ও বৈশ্বিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন সাইক্লোন, বন্যা ও দাবানল, যা সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ধ্বংস করছে, আর এই কারনেই মনবতার কল্যাে ও বিশ্ব শান্তির জন্য প্রতিবারের মতো এবারও এই গীতা যজ্ঞের আয়োন করা হয়।

যজ্ঞ, যা একটি পবিত্র অগ্নি অনুষ্ঠান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হ্রাসের জন্য প্রার্থনার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। যজ্ঞের প্রজ্জ্বলিত আগুন প্রতীকীভাবে সেই আশার প্রতিনিধিত্ব করে যে, এই অগ্নি মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণা দূর করবে। ৩০০-এর বেশি ভক্ত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন, যারা বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা করেন। যজ্ঞটি শ্রী শ্রী গীতাসংঘ বাংলাদেশের সভাপতি বিশিষ্ট পুরোহিত নিত্যানন্দ চক্রবর্তী পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায় এবং সমাজে অবদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্বীকৃতি প্রদান। "বীকন অফ চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং ন্যাশনাল এন্ড কমিউনিটি কন্ট্রিবিউশন" প্রদান করা হয় সেই সব ব্যক্তিদের, যারা তাদের সমাজে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছেন, নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন এবং সমাজে কোন না কোন ভাবে পরিবর্তন এনেছেন। বীকন অফ চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন: (১) নিত্যানন্দ চক্রবর্তী - সভাপতি, গীতা সংঘ বাংলাদেশ; সম্পাদক, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ হিন্দুইজম অ্যান্ড ফিলোসফি, যুক্তরাজ্য; (২) হিমাংশু গোস্বামী - সঙ্গীতশিল্পী ও কমিউনিটি নেতা; (৩) গৌরপদ দেব - ধর্মীয় শিক্ষক ও আধ্যাত্মিক নেতা; (৪) মিসেস শিপ্রা রায় - সঙ্গীতশিল্পী, সমাজসেবী এবং নারীর অধিকারকর্মী; (৫) ড. ঋষিরাম আরিয়াল - বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কমিউনিটি নেতা; (৬) ড. ডন কাহাওয়ে – উদ্যোক্তা।

এদের নিরলস প্রচেষ্টা কমিউনিটির উন্নয়ন, নেতৃত্ব এবং মানবিক কর্মকাণ্ডকে আরও শক্তিশালী করেছে। তাদের অবদান স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। এছাড়াও, অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি তরুণ ছেলে-মেয়েদের ইয়ুথ চেঞ্জ-মেকার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়, যেখানে তরুণ প্রজন্মের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, নেতৃত্ব এবং সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাঙ্গালী ইয়ুথ চেঞ্জ-মেকার অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন: (১) কৃষ্ণ শীল; (২) অর্পিতা চৌধুরী; (৩) লরা সাহা; (৪) শুভাঙ্গী দাস; (৫) সুদীপ্ত দাস; (৬) অদিতি শিকদার; (৭) নীলাভ্র সরকার; (৮) প্রত্যোষ চন্দ; (৯) অম্বিকা চক্রবর্তী। তরুণদের প্রতিভা, নিবেদন ও তাদের অবদানের জন্য প্রশংসা করা হয়, যারা বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে সংরক্ষণে অবদান রেখেছে। তাদের কৃতিত্ব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তরুণদের দৃঢ় সংকল্প পরিবর্তন আনতে এবং সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম।

বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে যে সব তরুণ-তরুণীরা বিশেষ অবদান রেখেছে, তাদের প্রতিভা, নিষ্ঠা ও প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা করা হয়। তাদের সাফল্য আমাদের সকলকে মনে করিয়ে দেয় যে তরুণদের দৃঢ় সংকল্প সমাজে পরিবর্তন আনতে এবং তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

গীতা যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত নিত্যানন্দ চক্রবর্তী ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন: "আজ আমরা এই পবিত্র গীতা যজ্ঞে একত্রিত হয়েছি, যা আমাদেরকে গীতা শাস্ত্রের কালজয়ী শিক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা আমাদের শান্তি, একতা ও করুণার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে অনুপ্রাণিত করে। আমরা আজ এমন একটা পৃথিবীতে বসবাস করছি যেখানে ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক দুঃখ-কষ্ট রয়েছে। তাই আমাদের কর্তব্য, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষাকে চিন্তায়-চেতনায় স্থাপনকরা। আর সেই শিক্ষা হল সমস্ত চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা এবং মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করা।" বিজিআরএফ এর সভাপতি তার সমাপনী বক্তব্যে উল্লেখ করেন "এই গীতা যজ্ঞ বিশ্বব্যাপী শান্তি এবং সম্প্রীতি স্থাপনের আমাদের দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভগবত গীতার শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা মানবতার কল্যাণে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।"

এওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও বিজিআরএফ এর গবেষনা পরিচালক ড. পি আর দত্ত বলেন: "আমরা আজ এমন কিছু ব্যক্তির অসাধারণ অবদানকে সম্মান জানাতে একত্রিত হয়েছি, যাদের নিরলস প্রচেষ্টা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে এবং অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার পথ তৈরি করেছে। এই পুরস্কার তাদের নিষ্ঠা এবং নেতৃত্বের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার প্রকাশ, যা প্রমাণ করে যে ছোট্ট একটি উদ্যমও ভবিষ্যতকে রূপান্তরিত করার শক্তি রাখে।"

অনুষ্ঠান শেষ হলে উপস্থিত সবার মধ্যে এক ধরনের একতা, আশা এবং আধ্যাত্মিক শক্তি দেখা যায়। বার্ষিক গীতা যজ্ঞ শুধু শান্তি, করুণা ও সম্প্রদায়ের মূল্যবোধ পুনর্ব্যক্ত করেনি, বরং বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠিত ও উদীয়মান নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উপরও আলোকপাত করেছে।