উত্তাপ বাড়ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কে
শান্তি আলোচনার মধ্যেই নতুন করে সংঘর্ষ হয়েছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে । ওই সংঘর্ষে ৫ পাকিস্তানি সেনা নিহতের দাবি করেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের ২৫ সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবিও করেছে তারা। এদিকে তুরস্কে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর জানিয়েছে।
আফগান তালেবান প্রতিনিধিদল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর আশ্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ও যাচাইযোগ্য পদক্ষেপ নিতে অনীহা প্রকাশ করায় এই স্থবিরতা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
রবিবার টানা নয় ঘণ্টার আলোচনার পর পাকিস্তানি প্রতিনিধিরা জানায়, তারা আফগান পক্ষের কাছে ‘চূড়ান্ত অবস্থান’ তুলে ধরেছেন।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেন, তালেবান সরকারকে অবশ্যই ‘সীমান্ত পেরিয়ে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বাস্তব ও যাচাইযোগ্য পদক্ষেপ’ নিতে হবে।
একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘আফগান তালেবানের সন্ত্রাসীদের প্রতি চলমান পৃষ্ঠপোষকতা পাকিস্তানের জন্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
তিনি আরও জানান, তালেবানের যুক্তিগুলো ‘বাস্তবতার সঙ্গে অসঙ্গত ও অযৌক্তিক’ হওয়ায় পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
পাকিস্তানের ওই কর্মকর্তা ভারতকে ইঙ্গিত করে বলেন, তালেবান প্রতিনিধিদল ‘অন্য কারও এজেন্ডা’ অনুসরণ করছে। আলোচনার মধ্যেই আজাদ কাশ্মীরের লিপা সেক্টরে ভারতীয় বাহিনীর সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা এই সন্দেহ আরও জোরালো করে তোলে।
আলোচনায় আফগান প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের দাবির লিখিত জবাব জমা দেয়, যার পর পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়। দুপুরে তুরস্ক ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শুরু হয়।
তবে দীর্ঘ আলোচনার পরও আফগান প্রতিনিধিদল কোনও লিখিত নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়নি। পাকিস্তান এই অস্বীকৃতিকে টিটিপি ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অনিচ্ছা হিসেবে দেখছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আফগান প্রতিনিধিরা কাবুল ও কান্দাহার থেকে নির্দেশনা নিচ্ছিলেন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা তাদের হাতে ছিল না।
দুই দিনের আলোচনায় পাকিস্তান টিটিপি, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের আফগান মাটিতে সক্রিয়তার আলোকচিত্র ও নথিপত্র তুলে ধরে। এমনকি সাম্প্রতিক সীমান্ত ঘটনায় আটক অনুপ্রবেশকারীদের আফগান জাতীয় পরিচয়পত্রও প্রদর্শন করা হয়।
একপর্যায়ে তালেবান টিটিপিকে সরাসরি আলোচনায় আনতে চাইলেও পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসা হবে না—এটা তালেবান সরকারের দায়িত্ব তাদের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করা।’
পাকিস্তানি আলোচকরা বলেন, দেশের জনগণের নিরাপত্তার জন্য যে কোনও মূল্য দিতে তারা প্রস্তুত। তালেবানের একগুঁয়েমির কারণে আফগান জনগণই শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও তারা সতর্ক করেন।
ইস্তাম্বুলে আলোচনা চলাকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, খুররম ও উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আফগান সীমান্ত পেরিয়ে বড় ধরনের অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছে। আইএসপিআর জানায়, ‘তুরস্কে দুই দেশের বৈঠক চলার সময়ই এসব অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে, যা আফগান সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।’
তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় এই দুই দিনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৯ অক্টোবর দোহা যুদ্ধবিরতির পর এটি ছিল পরবর্তী উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।
পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলে আইএসআই, সামরিক অপারেশন অধিদপ্তর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। আফগান দলে নেতৃত্ব দেন উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলভি রহমাতুল্লাহ নাজিব, সঙ্গে ছিলেন আনাস হাক্কানি, সুহাইল শাহিন, নূরুর রহমান নুসরাত ও আবদুল কাহার বালখি।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, যোগাযোগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া ঠেকাতে মধ্যস্থতাকারীরা দুই পক্ষকেই আলোচনায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
