ট্রাম্পের চাপে ১০৩টি বোয়িং জেট কিনছে কোরিয়ান এয়ার


মার্কিন বিমান নির্মাতা জায়ান্ট বোয়িং এবং কোরিয়ান এয়ার প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি চুক্তি ঘোষণা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের ওয়াশিংটন সফরের সঙ্গে মিল রেখে সোমবার (২৫ আগস্ট) চুক্তিটি ঘোষণা করা হয়। কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বাণিজ্য অংশীদারদের আরও বেশি মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
দুই কোম্পানির এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, কোরিয়ান পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চুক্তি এটি। চুক্তিতে ৭৮৭, ৭৭৭ এবং ৭৩৭ যাত্রীবাহী বিমান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কোরিয়ান এয়ারের প্রধান ওয়াল্টার চো বলেছেন, নতুন বিমানগুলো এয়ারলাইন্সটির বহরকে আধুনিক করবে। কারণ এটি আসিয়ানা এয়ারলাইন্সের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে। ফলে নতুন বিমানগুলো এয়ারলাইন্সটিকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকতে সাহায্য করবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার কয়েক ঘণ্টা পর চুক্তিটি ঘোষণা করা হয়। জুলাই মাসে এশিয়ান এই দেশটির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
এই চুক্তিটি দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠকের সময় ঘোষণা করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী কিম জং-কোয়ান।
একই দিনে দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতা জায়ান্ট হুন্দাই মোটর গ্রুপ ঘোষণা করেছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিনিয়োগ ২১ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার করছে।
বোয়িংয়ের বাণিজ্যিক বিমান বিভাগের প্রধান স্টেফানি পোপ কোরিয়ান এয়ারের এই চুক্তিটিকে ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন। এতে থাকবে ৫০টি বোয়িং ৭৩৭-১০ যাত্রীবাহী বিমান এবং ৪৫টি দীর্ঘ পাল্লার জেট। এছাড়াও কোরিয়ান এয়ার আটটি ৭৭৭-৮ ফ্রেইটার কার্গো বিমানও কিনবে।
বোয়িং জানিয়েছে, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কর্মসংস্থানকে সহায়তা করবে। বর্তমানে কোম্পানির বিশ্বব্যাপী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা কয়েকটি দেশও বড় আকারের বোয়িং বিমান কেনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। জুলাই মাসে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে ১০০টি বোয়িং বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।
ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী এয়ারলাইন গারুডা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর চুক্তির অংশ হিসেবে ৫০টি বোয়িং বিমান কেনার ব্যাপারে সম্মত হয়।
এসব চুক্তি মার্কিন কোম্পানির বিক্রিকে ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাসকে ছাড়িয়ে যেতে সাহায্য করেছে। যদিও গত কয়েক বছরে কয়েকটি মারাত্মক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বোয়িং বেশ সংকটে পড়েছে।
২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি বোয়িং ৭৩৭ বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানে থাকা ১৮৯ জনের সবাই নিহত হয়। কয়েক মাস পর আরেকটি বোয়িং বিমান ইথিওপিয়ায় উড্ডয়নের কিছু পরেই বিধ্বস্ত হয়। এতে আরও ১৫৭ জন নিহত হয়। ২০২৪ সালে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের একটি অকার্যকর জরুরি নির্গমন দরজার ওপর লাগানো প্যানেল মাঝ-আকাশে খুলে যায়।
এছাড়া গত বছর প্রায় আট সপ্তাহব্যাপী প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিকের ধর্মঘট যুক্তরাষ্ট্রে বোয়িংয়ের কারখানার উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।