ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান


ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সমাধানের পথ খুঁজতে ইউরোপের তিন পরাশক্তি—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান। এই তিন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ই৩’ নামেও ডাকা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাসের উপস্থিতিতে শনিবার (২১ জুন) সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
বৈঠকের বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা শনিবার জেনেভাতে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসব।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএর পাশাপাশি ইউরোপীয় কূটনীতিকরাও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইইউ প্রতিনিধি ছাড়াও ই৩, অর্থাৎ ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে তারা আরাগচির সঙ্গে কথা বলেন এবং পরমাণু আলোচনায় ফেরার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। ইরানের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়ার পর উভয়পক্ষই সরাসরি বৈঠকে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে বলেছেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলো একটি আলোচনাভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে আসবে।’ পরের দিন তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের’ সঙ্গে মিলে যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারো বলেন, ‘এই বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে আমরা তিন দেশই প্রস্তুত। আমরা চাই, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি স্থায়ীভাবে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আলোচনা হোক।’
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যে হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে সরাসরি সুইজারল্যান্ডে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।
ইরানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ল্যামি বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, ইরান যেন কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র না পায়।… কূটনৈতিকভাবে বিষয়টির মীমাংসা করতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় আছে।’
কায়া কাল্লাসও বলেছেন একই কথা। তার ভাষ্যে, ‘ইরান যাতে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো কূটনীতি।’
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না পারে, তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ধারাবাহিক হামলা চালানো হচ্ছে।
তবে ইসরায়েলের এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইরান। তাদের পরমাণু কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ’ দাবি করেছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাও জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
কূটনৈতিক পথ বন্ধ নয়
গতকাল (বৃহস্পতিবার) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে খুব শিগগির নতুন করে আলোচনা শুরুর উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পাঁচ দফা আলোচনা করেছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলার পর ষষ্ঠ দফার আলোচনা বাতিল করা হয়।
এর আগে, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের হামলা চলাকালে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ক আলোচনা পুনরায় শুরু করবে না। তবে কূটনৈতিক পথ যে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, সে কথাও উল্লেখ করেছে তেহরান।
এ ছাড়া জেনেভা থেকে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদক মিলেনা ভেসেলিনোভিচ জানান, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বকে যুদ্ধের দিকে গড়াতে না দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছে ইউরোপীয় দেশগুলো।
ট্রাম্পের অবস্থান
এদিকে ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।’
তাই এ সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের একটি নিষ্পত্তি খোঁজার সুযোগ রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
চলমান পরিস্থিতিতে ইরানের সুসংরক্ষিত ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালানো হবে কি না, তা-ই এখন বিবেচনা করছেন ট্রাম্প।
এই স্থাপনাটি একটি পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা দিয়েই এটিকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়।