অবিলম্বে তেহরান খালি করার আহ্বান ট্রাম্পের


ইরান-ইসরায়েল সংঘাত পঞ্চম দিনে গড়ানোর আগেই তেহরানবাসীদের শহর খালি করার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (১৬ জুন) নিজের ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, “সবাইকে এখনই তেহরান ত্যাগ করতে হবে।”
ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “ইরান আমার প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নিলে আজকের প্রাণহানি এড়ানো যেত। এটি দুঃখজনক ও অনর্থক প্রাণহানি। পরিষ্কার করে বলছি- ইরান পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণ করতে পারে না। আমি বারবার এটি বলেছি!”
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা
গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলা ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ইরানে একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল; জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
টেলিভিশনটির প্রচারিত সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।”
বার্তা সংস্থা এপি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে টেলিভিশন ভবন কেঁপে ওঠে এবং বিস্ফোরণের শব্দে দৌড়ে স্টুডিও ছাড়তে বাধ্য হন এক নারী প্রতিবেদক।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশনের ওপর হামলার আগে তেহরানের মধ্যাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে শহর ছাড়ার সতর্কবার্তা দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সামরিক বাহিনীর দাবি, ওই স্টেশনটি ইরানি সামরিক তৎপরতার জন্য একটি ঢাল হিসেবে কাজ করছিল।
এ ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি “অনেক, অনেক বছর” পিছিয়ে গেছে। তিনি বলেন, “ইরান সরকারের উৎখাত ইসরায়েলের লক্ষ্য নয়, তবে এই হামলার ফলেই যদি তা ঘটে যায়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।”
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রতিদিন যোগাযোগ হচ্ছে।
এদিকে, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ফোর্দোতে হামলা চালাতে যে ধরনের বোমার প্রয়োজন, তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েখিয়েল লাইটার।
সোমবার মেরিট টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লাইটার বলেন, “আকাশ থেকে ফোর্দোকে ধ্বংস করতে হলে যে বোমা দরকার, তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই আছে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নেবে যে তারা এই পথে এগোবে কি-না।”
হামলায় সম্প্রচারকর্মী নিহত
সোমবার ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহত কর্মীর নাম মাসুমে আজিমি। তবে তিনি ঠিক কোন হামলায় মারা গেছেন- সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
ইসরায়েলের দুটি টিভি চ্যানেলের কার্যালয় খালি করার হুমকি
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হামলার পাল্টা জবাবে ইসরায়েলের দুটি টেলিভিশন চ্যানেল খালি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। ইরানের আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যম ফার্স ও মেহরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান জানায়, ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ ও চ্যানেল ১৪-এর প্রধান কার্যালয় দ্রুত খালি করা উচিত। কারণ সেগুলোতে হামলা চালানো হতে পারে।
পঞ্চম দিনে ফের পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু
এসব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে এই সংঘাত এবং ভোর থেকেই পাল্টাপাল্টি হামলায় মেতে উঠেছে দুই দেশ। মঙ্গলবার ইসরায়েলের দিকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই হামলার কথা জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৩৯ মিনিটের দিকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক করত সাইরেন বাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় সাইরেন বাজানো হয়েছে এবং নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, “পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রেই অবস্থান করুন।”
জি-৭ সম্মেলন শেষ না করেই ফিরছেন ট্রাম্প
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের কারণে কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে একদিন আগেই ফিরছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিটের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, জি-৭ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তিতে সই করেছেন ট্রাম্প। অগ্রগতিও হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির কারণে তিনি আজ রাতেই রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে নৈশভোজ শেষে রওনা হবেন।
ইরানের সঙ্গে দ্রুত বৈঠকের নির্দেশ ট্রাম্পের
সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজতে ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক ব্যক্তি ও এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল প্রথম দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর থেকেই ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলে আসছেন, ইরানকে আলোচনার টেবিলে আসতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। একই সঙ্গে ইরান ও তাদের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের পথ খোলা রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
জি-৭ সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও ট্রাম্প জানান, ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং মার্কিন কর্মকর্তারা এই সপ্তাহেই ইরানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসার প্রত্যাশা করছেন।
এক মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, এখনও কোনো বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়নি, তবে ইসরায়েল ও ইরান একটি ইতিবাচক পথে এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
ট্রাম্পও জানিয়েছেন, সোমবার মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তিনি বলেন, “আমার মনে হচ্ছে, ইরান এখন কার্যত আলোচনার টেবিলে বসতে আগ্রহী। তারা একটি চুক্তি করতে চায়।”
তবে কূটনৈতিক উদ্যোগ ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ কী হতে পারে- বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে কি না- সে বিষয়ে কিছু জানাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পরিধি বাড়াতে চায় না ইরান। তবে কোনো আক্রমণের সমানমাত্রায় পাল্টা জবাব দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই আলোচনা এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হওয়ার ওপর নির্ভর করছে।”
স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে কোনো হামলায় অংশ নেয়নি।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র অ্যালেক্স ফিফার বলেন, “মার্কিন বাহিনী প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানেই রয়েছে এবং তা এখনো অপরিবর্তিত। আমরা কেবলমাত্র আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নেব।”