বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র ৮ জন

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০১ এএম
বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র ৮ জন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবায় বর্তমানে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তাসহ নিয়মিত চিকিৎসক ৬ জন ও খণ্ডকালীন চিকিৎসক ২ জন। তবে দীর্ঘদিন যাবত ৫ মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য থাকায় ন্যূনতম সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ার সেন্টারের নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা কয়েক প্রকার ওষুধেই সীমাবদ্ধ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা সময় এ নিয়ে ওঠে আলোচনা-সমালোচনা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, হেলথকেয়ারে সেন্টারে বর্তমানে কর্মকর্তা আছেন ১০ জন এবং কর্মচারী ১৬ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন নিয়মিত, ৭ জন মাস্টার রোলে, আর ৩ জন কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় ঘাটতি মেটাতে অন্য শাখা থেকে ৩ জন কর্মচারীকে এনে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কাজ। তাছাড়া সেখানে কোনো নার্সের পদ নেই, নেই কোনো বিশেষায়িত ইউনিট, কোনো ডেন্টাল ইউনিটও নেই।

হেলথ কেয়ারের ডেন্টাল বিভাগে ১৪ বছর আগে সর্বশেষ একজন খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে তার জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি কোনো নতুন চিকিৎসক। বিভাগটির ডেন্টাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও এখন প্রায় অকেজো।

এছাড়া হেলথকেয়ার সেন্টারে ৭ প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাসের ওষুধ, চর্মরোগের মলম ও প্যারাসিটামল বিনামূল্যে প্রদান করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর তুলনায় বহিরাগত রোগীর সংখ্যা সেখানে বেশি থাকে। তাছাড়া লিফট বন্ধ থাকায় হাঁটা-চলায় অক্ষম রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হেলথকেয়ার সেন্টারের নিচ তলার টয়লেট অপরিচ্ছন্ন, কোনোটার দরজা ভাঙ্গা। হেলথকেয়ারের বাইরেই রয়েছে ময়লার ভাগাড়, বিভিন্ন আবাসিক হলের ময়লা ফেলা হয় সেখানে। দিনের বেলা কখনও সেন্টারটির বারান্দা মোটরসাইকেল রাখার পার্কিং হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যায়। তাছাড়া হেলথকেয়ার সেন্টারের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা কয়েকবছর আগে থেকেই নারী শিক্ষার্থীদের সাময়িক আবাসনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থী হাসান তপু বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে (হেলথকেয়ার সেন্টারে) গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে যেতে বলা হয়। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ার সেন্টারে জরুরি চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকার কথা। সেখানে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই; পুরো ব্যবস্থাপনাই অগোছালো।’

অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা ও সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মাহিরুজ্জামান নিলয় বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না। তা পাওয়া খুব জটিল প্রক্রিয়া। ডাক্তারের সিগনেচার থেকে শুরু করে আরও অনেক নাটক। তার ওপর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর ভাঙা, সাইরেন ঠিক নেই, বাজেই না। অ্যাম্বুলেন্স তো নয়, যেন লক্কর ঝক্কর কোনো গাড়ি!’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. সাঈদুর রহমান (শওকত) বলেন, ‘আমাদের হেলথ কার্ড রেডি। ভিসি মহোদয় ও অ্যাডভাইজার (উপদেষ্টা) মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই এটা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছে দেব।’

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তিগতভাবে কোনো ওষুধ কেনে না। সরকারি কিছু ক্রয় নীতিমালা আছে। ওষুধের গুণগত মান ও মূল্য দেখেই এসব ওষুধ কেনা হয়।

হেলথকেয়ার সেন্টারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে তিনি জানান, একটা সময় কেবল ৮-১০টা টেস্ট করা হতো, যা এখন করা হয় ২৮টা; তার মধ্যে ১৫টা টেস্টই করা হয় নামমাত্র মূল্যে। ডেঙ্গু টেস্ট, ইউরিন টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি। বাকি টেস্টগুলোর দামও বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে অনেক কম, ছাত্রদের জন্য প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ছাড়। তাছাড়া এক্সরের জন্য রয়েছে ডিজিটাল মেশিন।

অ্যাম্বুলেন্সের কাঠামোগত ত্রুটি ও সময়মতো না পাওয়ার বিষয়ে নিয়ে ডা. সাঈদুর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গাড়ি পরিবহন শাখার অন্তর্ভুক্ত। দুইটা অ্যাম্বুলেন্স এর মধ্যে একটা সব সময় থাকে, একটা রিজার্ভ থাকে। অ্যাম্বুলেন্স কে নিচ্ছে—সবই রেকর্ড থাকে। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙা কি না, জ্বালানি আছে কি না—সব দেখে পরিবহন শাখা।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, ‘হেলথকেয়ারের ডাক্তার সংকটের ব্যাপারে আমরা অবগত। সমস্যাটি সমাধানের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তা নিরসরণে কাজও শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ডাক্তার নিয়োগের ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। তাই এই সমস্যা দূর করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে ওষুধের ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি।