জরাজীর্ণ সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝুঁকি নিয়ে পড়তে আসে শিক্ষার্থীরা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৮ এএম
জরাজীর্ণ সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝুঁকি নিয়ে পড়তে আসে শিক্ষার্থীরা

দরজা-জানালা সব ভেঙে গেছে, দেওয়ালগুলো জরাজীর্ণ, খুলে পড়ছে চালের টিন; বর্ষাকালে বৃষ্টি এলে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষে, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, শীত-রোদ-বৃষ্টি যাই হোক, ক্লাস করতে মন বসে না শিক্ষার্থীদের। এমনই পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে ফেনীর দাগনভূঞার সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে আসে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১০৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

সরকারি হলেও বিদ্যালয়টিতে খেলার মাঠ নেই; নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষেরও সংকট। এক কথায়, একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার উপযোগী যে পরিবেশটুকু দরকার তার ছিটেফোঁটাও নেই এখানে। শিক্ষার উপযোগী পরিবেশের অভাবে প্রতি বছরই বিদ্যালয়টিতে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অভিভাবকেরা এই বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে আগ্রহী নন বলে মত শিক্ষকদের।

জানা যায়, ১৯৮৭ সালে ৪ কক্ষবিশিষ্ট একটি টিনশেড ঘরের মাধ্যমে সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই টিনশেডের ঘরটির অবস্থা-ই বর্তমানে জরাজীর্ণ। ২০১১ সালে পুরনো স্কুল ভবন থেকে ১০০ গজ দূরে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন হলেও দুই শ্রেণিকক্ষের বেশি নেই নতুন ভবনে। তাই বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে শ্রেণি-কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে পাঠদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

অপরদিকে, জরাজীর্ণ ভবনটি এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানায়, বৃষ্টি এলে তাদের শরীরে পানি পড়ে; জামাকাপড়, বইখাতা ভিজে একাকার হয়ে যায়। দরজা-জানালা ভাঙা ঘরে তাদের ক্লাস করতে মন চায় না।

তাদের কথায়, “ঘরের চাল যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। অন্যদের বিদ্যালয় তো এমন নয়, তাহলে আমাদের বিদ্যালয় এমন ভাঙাচোরা কেন?”

স্থানীয় অভিভাবক মিজানুর রহমান জানান, দুই কক্ষবিশিষ্ট বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করে দিলেও ভবনটিতে কোনো শৌচাগার নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়ে ছাত্রছাত্রীদের পুরনো ভবনের শৌচাগারে যেতে হয়, সেটিও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমুন নেছা বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিতে হচ্ছে। বিকল্প কোনো ভবন না থাকার কারণে বাধ্য হয়ে সেখানেই পাঠদান করতে হয়।”

তিনি বলেন, “আমাদের দুইটা ভবন। পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ২০১১ সালে নির্মিত দুই কক্ষবিশিষ্ট নতুন ভবনটি শ্রেণি-কার্যক্রম চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়।”

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, “বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাধ্য হয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। এখানে নতুন ভবন প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “আমাদের স্কুলটি অবকাঠামোর দিক থেকে দাগনভূঞার অন্যান্য স্কুল থেকে পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন পাঁচটি, কিন্তু রয়েছে দুটি। বিদ্যালয়ের আলাদা আলাদা দুই জায়গায় ক্লাস চলায় শ্রেণি-কার্যক্রম তদারকি করতে সমস্যা হয়। যদি দুটি ক্যাম্পাস একই জায়গায় হতো তাহলে কোনো সমস্যা হতো না।”

বিদ্যালয়ের এই সংকটের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়ে জানতে দাগনভূঞা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তার জানা আছে বলে জানান।

এই কর্মকর্তা বলেন, “সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, “এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক যদি আবেদন করেন, তাহলে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাব।”