প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে জাবির আবাসিক হলে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৭ পিএম
প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে জাবির আবাসিক হলে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হল থেকে তাকিয়া তাসনিম নামে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের ৮ম তলার ৭০০৫ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। আশুলিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত তাকিয়া তাসনিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৫৩ ব্যাচের (২০২৩-২৪) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি মাগুরা সদর উপজেলার পারান্দুয়ালী এলাকার ব্যবসায়ী আরিফ হোসেনের মেয়ে।

জানা গেছে, হলের ৭০০৫ নম্বর কক্ষটিতে একাই ছিলেন তাকিয়া। প্রেমিকের সাথে মনোমালিন্যের জেরে তাকে ভিডিও কলে রেখেই তিনি গলায় ফাঁস নেন। তখন ওই প্রেমিক নিহত ছাত্রীর বান্ধবীদের ফোন করে বিষয়টি জানান। পরে দরজা ভেঙে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তৎক্ষণাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসককে হলে আনা হলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর সকাল সাড়ে দশটার দিকে আশুলিয়া থানা পুলিশ এসে মরদেহটি নিয়ে যায়।

তাকিয়ার সহপাঠী ও হল প্রভোস্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থী আবাসিক হলে অনিয়মিত ছিলেন। তিনি সাভারে তার মামার বাসায় থেকে ক্লাস করতেন। শনিবার হলে আসেন। অন্য রুমমেটরা হলে না থাকায় তিনি একাই রুমে ছিলেন। তার মোবাইল ফোনে দেখা গেছে, ফাঁস নেওয়ার আগে ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ভিডিও কলে কথা বলেছেন।

সহপাঠীরা জানান, ভিডিও কলে থাকা ব্যক্তিটি তাকিয়ার প্রেমিক সাব্বির। কলে তাদের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সাব্বিরকে ভিডিও কলে রেখেই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা করেন তাকিয়া। এ সময় ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের বিষয়টি জানান সাব্বির। তারা হল প্রভোস্টকে জানান। পরে দরজা ভেঙে তাকিয়াকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান সহপাঠীরা। উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বীরপ্রতিক তারামন বিবি হল প্রভোস্ট আবেদা সুলতানা বলেন, ‘আমি গত রাতে প্রায় ১০টা পর্যন্ত হলে ছিলাম। আনুমানিক রাত ৫টার দিকে আমার কাছে এই তথ্য দেয় মেয়েরা। আমি তাকিয়াকে উদ্ধার করতে বলি এবং হল সুপারকে বিষয়টি জানাই। সেই সঙ্গে মেডিক্যাল সেন্টারে ফোন দিয়ে চিকিৎসককে সেখানে যেতে বলি। মেয়েরা প্রথমে দরজা ভাঙতে ভয় পাচ্ছিল। এক পর্যায়ে কিছু মেয়ে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে। চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় অভিভাবক তার মামা এসেছেন। তার রুমে কিছু ডায়েরি ও মোবাইল ফোনসহ কিছু জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। পুলিশ সেগুলো দেখছে। সেখানে হয়তো কিছু থাকতে পারে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা জানার সঙ্গেসঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছি। পরে আশুলিয়া থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহটি নিয়ে যান।’

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘নিহত শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে মরদেহটি সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে৷ তার পরিবারের সাথে কথা বলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’