৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের দুই দিন একাডেমিক সব কার্যক্রম বর্জন
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করতে কমিশন না করার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার সাত কলেজের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে সবগুলো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
শনিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা কলেজে সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পার্সন ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী সাগর বলেন, আমরা সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের দাবির আন্দোলন করছি। ঢাবির অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি বেশ পুরোনো। দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে তারা আমাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৫ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে আমাদের আন্দোলনের ন্যায্যতা সম্পর্কে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও আমরা ধারাবাহিকভাবে পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের দাবি ও আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরছি। সর্বমহলে আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে সমর্থন পেয়েছি।
এই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার সঙ্গেও আমরা সাক্ষাৎ করেছি। সভায় দুই উপদেষ্টা আমাদের দাবি ও আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চান। এরপর তারা আমাদের সাত কলেজের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাইরে পৃথক প্রশাসনিক ভবনে কার্যক্রম চালানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমরা চেয়েছি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়। তাই ওই আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। পরে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই এ সভা শেষ হয়। উপদেষ্টাদের সঙ্গে সভা শেষ হওয়ার একই সময়ে মধ্যে আমরা খবর পেয়েছি, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকছে। তবে তাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে তাদের বিষয়টা আলাদাভাবে দেখা হবে।
সাত কলেজ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জাকারিয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ঢাবি শিক্ষার্থীরা কেউই এখন আর এ অধিভুক্তি চাইছেন না। আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলনে রয়েছি। এর মধ্যে আমরা শুনতে পাচ্ছি, হঠাৎ করে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে দিয়ে সাত কলেজকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার দুরভিসন্ধি হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করে দেবে। অধিভুক্তি বাতিল করার আগে অবশ্যই সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বডি তৈরি করতে হবে। যে সমাধানকে আমরা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার কথা বলছি। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের মূল দাবি থেকে সরে আসবো না। সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দাবি, সেটি আমাদের থাকবেই।
তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করতে হবে। সাত কলেজ নিয়ে যেকোনো ধরনের চক্রান্ত প্রতিরোধ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের অবিবেচক বক্তব্য প্রত্যাহার, কমিটি বাতিল, কমিশন গঠন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার দাবিতে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এসময় তিনি ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেগুলো হচ্ছে — আগামী রোববার ও সোমবার সাত কলেজের অভ্যান্তরীণ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবে না। একইসঙ্গে সাত কলেজের সবগুলো ক্যাম্পাসে দাবির পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবে।
একইসঙ্গে এসময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।