এইচএসসিতে বসছেন সাড়ে ১২ লাখ পরীক্ষার্থী, স্বাস্থ্যবিধিতে কড়াকড়ি

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৫ জুন ২০২৫, ০৮:১২ পিএম
এইচএসসিতে বসছেন সাড়ে ১২ লাখ পরীক্ষার্থী, স্বাস্থ্যবিধিতে কড়াকড়ি
ছবি : সংগৃহীত

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জুন)। এবার ১১ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারাদেশে এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন ছাত্রী। সারাদেশের ২ হাজার ৭৯৭ কেন্দ্রে এবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

সময়সূচি অনুযায়ী, প্রথম দিনে সাধারণ ৯ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক হাজার ৬০৫ কেন্দ্রে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মাদরাসা বোর্ডের অধীন ৪৫৯ কেন্দ্রে আলিমের কোরআন মাজিদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীন ৭৩৩ কেন্দ্রে এইচএসসি (বিএম/বিএমটি) পরীক্ষা নেওয়া হবে। সব বোর্ডের প্রথম দিনের পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হবে দুপুর ১টায়।

ঢাকা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৯১ হাজার ২৪১ জন, রাজশাহীতে এক লাখ ৩৩ হাজার ২৪২ জন, কুমিল্লায় এক লাখ এক হাজার ৭৫০ জন, যশোরে এক লাখ ১৬ হাজার ৩১৭, চট্টগ্রামে এক লাখ ৩৫ জন। এছাড়া, বরিশালে ৬১ হাজার ২৫ জন, সিলেটে ৬৯ হাজার ৬৮৩, দিনাজপুরে এক লাখ ৩ হাজার ৮৩২ এবং ময়মনসিংহে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন। মাদরাসা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজার ১০২ জন। কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম/বিএমটি) পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৯ হাজার ৬১১ জন।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই এবার এইচএসসি পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক। পাশাপাশি প্রশ্নফাঁস ও নকল প্রতিরোধেও তৎপর আমরা। স্বাস্থ্যবিধিসহ সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেগুলো তদারকি করার জন্য বোর্ডের একাধিক টিম কাজ করবে।

স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কড়াকড়ি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পেছানোর দাবি তুলেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে তারা আন্দোলনও করেছেন। তবে পরীক্ষা পেছানোর এ দাবি পাত্তা পায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কাছে। পূর্বঘোষিত সময়সূচি মেনে শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

তাদের উদ্বেগ আমলে নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি কেন্দ্রে মেডিকেল টিম সক্রিয় রাখার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও কেন্দ্রের সামনে যেন জটলা না থাকে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেন্দ্রের অভ্যন্তর ও আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং পরীক্ষা শুরুর আগে মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশ
পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। এ সময়ের পর কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পরে প্রবেশ করলে রেজিস্ট্রার খাতায় তাদের নাম, রোল, প্রবেশের সময় ও দেরির কারণ উল্লেখ করে পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করবেন।

এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোনো কক্ষে পরীক্ষা বিলম্বে শুরু হলে, যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে- পরীক্ষার্থীদের ততটুকু সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের ৩৩ নির্দেশনা
পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রতি ৩৩ নির্দেশনা দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। এরমধ্যে রয়েছে- পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে তিন দিন আগে ট্রেজারিতে ট্রাঙ্কে রক্ষিত প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এসময় ট্রেজারি অফিসার, কেন্দ্র সচিব এবং পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই উপজেলা সদরের বাইরে প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক না রাখাসহ আরও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপির নির্দেশনা
পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীদের হাতে ‘যথেষ্ট সময়’ নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়াসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ। ডিএমপি বলছে, যেসব পরীক্ষার্থী ব্যক্তিগত যানবাহনে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসবেন, তারা পরীক্ষা কেন্দ্রের সম্মুখে নামার পরিবর্তে কম ব্যস্ত নিকটবর্তী স্থানে নেমে পরীক্ষা কেন্দ্রে হেঁটে আসবেন।

পরীক্ষা শেষে ফেরার সময়ও কেন্দ্র থেকে হেঁটে গিয়ে নিকটবর্তী কম ব্যস্ত কোনো স্থান থেকে গাড়িতে উঠবেন। কোনো যানবাহন পরীক্ষা কেন্দ্রের নিকটবর্তী সড়কে পার্কিং করে রাখা যাবে না। পার্কিং করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

এছাড়া অভিভাবকদের পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশের সড়কে অবস্থান না করার অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি বলেছে, অভিভাবকদের সড়কে অবস্থান করে যান চলাচল বিঘ্ন করা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী অর্থদণ্ডযোগ্য অপরাধ।

পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে আসা যাওয়ার সুবিধার্থে পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে এবং পরীক্ষা শেষের এক ঘণ্টা পর পরীক্ষার্থী ছাড়া অন্যসব যাত্রীর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্র সংলগ্ন সড়কগুলো যথাসম্ভব পরিহার করারও অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, পরীক্ষায় নকল ও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট থানার ট্যাগ অফিসার ও পুলিশের উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্র সঠিক সেট ও সংখ্যা যাচাই করতে বলা হয়েছে। অব্যবহৃত প্রশ্নপত্রের সেট কোনো অবস্থাতেই খোলা যাবে না। অক্ষত অবস্থায় বোর্ডে ফেরত পাঠাতে হবে। পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পুলিশি প্রহরায় জমা দিতে হবে।