বৃষ্টিতে নাজেহাল কারওয়ানবাজার


সোমবার ভোর থেকেই ঢাকায় অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়। রোববার সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও গভীর রাত থেকে বেড়েছে বৃষ্টির তীব্রতা। আজ সকাল ৭টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ঝরেছে। এতে অফিসগামী, কর্মজীবী মানুষ যেমন বিপাকে পড়েছেন তেমনি নাজেহাল অবস্থা কারওয়ানবাজারের। ব্যবসায়ীদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই।
রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি কাঁচাবাজার কারওয়ানবাজার। বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে বাজারের সড়ক ও গলিপথ। হাঁটুপানি ডিঙিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা বাজারে যাতায়াত করছেন, কেউ ভ্যানে, কেউ কাঁধে কিংবা হাতে করে টেনে নিচ্ছেন সবজির ঝুড়ি। এমন ভোগান্তির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খোলা আকাশের নিচে বসা ক্ষুদ্র সবজি বিক্রেতারা। ভিজে গেছে অনেক সবজি, বিক্রির অযোগ্য হয়ে পড়েছে কাঁচা শাক-সবজি।
বাজারের একাধিক বিক্রেতা জানান, বৃষ্টির দিনে ক্রেতা যেমন কম আসে, তেমনি যারা আসে তারাও সবজির দাম কম চাইতে থাকে। ফলে অনেক সময় বিক্রেতারা ক্রয়মূল্যেই সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন।
সবজি বিক্রেতা হাসিবুর বলেন, সকাল থেকে ভেজা শরীরে বসে থাকি, বিক্রিও হয় না। মানুষ কম আসে। যারা আসে, তারা দাম কম দেয়। বাধ্য হয়ে যে দামে কিনেছি, সেই দামেই বিক্রি করছি। তাতেও লোকসান।
আরেক বিক্রেতা আলমাস জানান, পানি থইথই করছে চারপাশে। এক জায়গায় বসে থাকতে পারি না। জায়গা বদলালেও লাভ হয় না। সবজি তো বেশি সময় রাখা যায় না। তাই কম দামে বিক্রি করেই চলে যাচ্ছি।
বাজারে আসা অনেক ক্রেতাও এই অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ। কেউ হাঁটুপানি পেরিয়ে ভেতরে এসে দেখছেন, অনেক জায়গায় পচা সবজি, কাদা এবং দুর্গন্ধ।
মোহাম্মদ শাহিন নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে ঢুকতেই হাঁটুপানি। এরপর যেখানে সেখানে নোংরা পানি আর দুর্গন্ধে থাকা দায়। প্রশাসনের কোনো নজর নেই বলেই বারবার এমনটা হচ্ছে।
ক্রেতা ও বিক্রেতারা মনে করেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে, বাজার চত্বর ও আশপাশে পর্যাপ্ত নালা-নর্দমা না থাকা, বাজারের ভিতরে অপরিকল্পিত দোকান বসানো এবং নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
মেহেদী হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে এমন ভোগান্তি প্রতি বর্ষায় লেগেই থাকবে। একই অভিযোগ করেন বিক্রেতা মো. সুমন।
টানা বৃষ্টিতে ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশ কিছু সবজির দাম কমেছে।
পাইকারি দরে পাওয়া যাচ্ছে করলা ৫ কেজি (১ পাল্লা) ৩৮০ টাকা, কাকরোল ৫ কেজি ৩০০ টাকা, পেঁপে ৫ কেজি ৫০–৬০ টাকা, বেগুন (বড় কালো) ৫ কেজি ৫০০ টাকা, বেগুন (লম্বা/গোল) ৫ কেজি ৩০০ টাকা, বরবটি ৫ কেজি ৩২০ টাকা, পটল ৫ কেজি ৩০০ টাকা, চিচিঙা ৫ কেজি ২০০ টাকা, ধনিয়াপাতা ৫ কেজি ৩০০ টাকা, কচুরমুখি ৫ কেজি ১৮০ টাকা, শসা ৫ কেজি ২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫ কেজি ৫০০–৫২০ টাকা, লাউ ১ পিস ৪০ টাকা এবং জালি কুমড়া ১ পিস ২০ টাকা।
আড়তদার মহসিন মিয়া বলেন, বৃষ্টির দিনে পানি জমে যায় বাজারে। হাঁটুপানি হয়ে যায় অনেক গলিতে। ফলে ক্রেতা আসে না, এতে দাম পড়ে যায়। এটা প্রতিবারই হয়, সমাধান কেউ দেয় না।