সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম ১৫০% বৃদ্ধির প্রস্তাব


সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। গ্যাসের দাম ঘনমিটারপ্রতি ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করতে তারা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) আবেদন করেছে। কমিশন ৬ অক্টোবর গণশুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে। গত ১০ আগস্ট দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব করা হয়।
এর আগে গত ২৮ জুলাই এখতিয়ার না থাকলেও দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয় জ্বালানি বিভাগ। গ্যাসের দাম বাড়লে সারের দামও বাড়বে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বাড়তি দাম কৃষককে দিতে হবে, নয়তো সারে সরকারের ভর্তুকি বাড়াতে হবে। পেট্রোবাংলা বলেছে, দাম বাড়ালে সার উৎপাদনে চাহিদা অনুসারে গ্যাস দেওয়া যাবে।
দেশে ছয়টি সার কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরোনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি। তাই কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য পাঁচ সার কারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ২৫ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে ৬.৬ কোটি ঘনফুট। দেশে বছরে সারের মোট চাহিদা প্রায় ৬৯ লাখ টন, চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি করা হয়।
পেট্রোবাংলা বলছে, কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব অনুসারে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে ছয় মাস পুরোমাত্রায় (২৫ কোটি ঘনফুট) গ্যাস দেওয়া হবে। বাকি ছয় মাসের মধ্যে এপ্রিল-মে ১৬.৫ কোটি, জুনে ১৭.৫ কোটি এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ২০২৫ সালে ১০৮ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। দাম বাড়ানো হলে আরও ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ বাড়ানো হবে। পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানিতে খরচ হবে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। দাম বাড়ানো হলে আয় হবে ৪৪ হাজার ৩৪২ কোটি, এরপরও ঘাটতি থাকবে আট হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। সরকারের ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বিবেচনায় নিলে ঘাটতি থাকবে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। ঘনমিটারপ্রতি গ্যাসে খরচ ২৮.৭৮ টাকা। দাম বাড়ালে গড় বিক্রয়মূল্য হবে ২৪.৫৬ টাকা। ঘাটতি থাকবে ৪.২২ টাকার মতো।
পেট্রোবাংলার এক পরিচালক জানান, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সঙ্গে দাম বাড়ানোর বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
বিসিআইসি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, গ্যাসের দাম নিয়ে কমিটি কাজ করছে। সেখানে শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। গ্যাসের দাম বাড়লে সার উৎপাদনে যে বাড়তি টাকা লাগবে তা সরকার দেবে।
বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, এখন প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের উৎপাদন খরচ ৩৮ টাকা। ডিলারদের কাছে তা বিক্রি করা হয় ২৫ টাকায়। সরকার কেজিপ্রতি ১৩ টাকা ভর্তুকি দেয়। গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ২৭ টাকায়। সূত্র আরও জানায়, গ্যাসের দাম ৪০ টাকা করা হলে সারের দাম পড়বে প্রায় ৫৬ টাকা।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে সার, কৃষি, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।