আইসিএক্স বাদ দিলে সরকার হারাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৯ মে ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম
আইসিএক্স বাদ দিলে সরকার হারাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা

দেশীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে নতুন টেলকো টপোলজি রাজস্ব আয়ে ধ্বস নামাবে এবং বেকারত্ব সৃষ্টি ও জাতীয় নিরাপত্তা সঙ্কটে ফলবে। এই খাত থেকে আইিএক্স বাতিল হলে এক ধাক্কায় সরকার বছরে ৩০০ কোটি টাকা কমবে। বিপরীতে আয় হবে ১৬ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হারাবে ৭০০ প্রকৌশলী।

আজ বৃহস্পতিবার টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্কস বাংলাদেশের (টিআরএনবি) আয়োজিত “খসড়া টেলিযোগাযোগ সংস্কার নীতিমালা-২০২৫: ইন্টারকানেক্সন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) এর প্রাসঙ্গিকতা অনুষ্ঠিত কর্মশালায়  এ দাবি জানানো হয়।

টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।

টেলিকম নীতি পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে আইসিএক্স ও টেলিকম রিপোর্টারদের খোলামেলা সংলাপে এমনটাই দাবি করেছে ব্যবসায়ীরা।

টিআইওবি সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান (অব) বলেন, আইসিএক্স টেলিকম খাতের তৃতীয় চোখ। এই খাতের ওয়াচ ডগ। আমাদের আছে বিশ্বমানের প্রকৌশলী। এরাই টেলিকম থাতের উন্নয়ন করেছে। কিন্তু আজ এই খাত বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।

আইওবি কোষাধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অব) জানান, স্থানীয় ব্যবাসা ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেয়া, মানিলন্ডারিং বন্ধ এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় টবডিএম নীতিমালা করা হয়েছিলো।

তিনি বলেন, চার মাস আগে টিডএম থেকে আইপিতে যেতে সরকারি নির্দশনায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আমরা সর্বশেষ টেলিকম প্রযুক্তি স্থাপন করেছি। কিন্তু এখন নতুন টপোলজি পুরো খাতকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সরকার লেয়ার কমানোর কথা বলে মোবাইল অপারেটরদের লাইসেন্স ছাড়াই গেটওয়ে লেবেলে সবক্ষেত্রেই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

অগ্নি সিস্টেমসের হেড অব অপারেশন আহমেদুর রহমান রুমেল জানান, জুলাইয়ের পর প্রতিদিন দেশে শত কোটি এসএমএস আটইসিএক্স এর মাধ্যমে বিনিময় হয়। এতে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। কেনো টাকাই পাচ্ছে না সরকার। আইসিএক্স এর মাধ্যমে এসএমএস বিনিময় হলে সরকারের আয় হবে ৭৪ কোটি টাকা।

বক্তারা জানান, দেশে ৫০টিরও বেশি ভয়েস সেবাদাতা অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস (মোবাইল, পিএসপিএন ও আইপিটিএসপি) অপারেটর কাজ করছে। এগুলোর প্রত্যেকে পৃথকভাবে দ্বিপক্ষীয় সংযোগ স্থাপন করতে গেলে আইসিএক্স ব্যবস্থার চেয়ে খরচ বেশি হবে। আইসিএক্স বাতিলে অবৈধ ভিওআইপি ও রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ বেড়ে যাবে। 

কর্মশালায় আইসিএক্স এর কার্যক্রম তুলে ধরে জানানো হয়, আইসিএক্সের মূল কাজ হলো ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েগুলোর (আইজিডব্লিউ) মাধ্যমে বিদেশ থেকে যেসব কল আসে, তা মোবাইল ও অন্যান্য টেলিফোন (এএনএস বা অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস) অপারেটরের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আইসিএক্সের মাধ্যমে কল সরকারের নজরদারিতে থাকে। এর ফলে গ্রে ট্রাফিক বা অবৈধ কলের মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ সম্ভব হয়। তারচেয়েও বড় বিষয় হলো—আইসিএক্সের ডিজিটাল নজরদারির মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি ‘টেলিকম খাতে নেটওয়ার্ক ও ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স পুনর্বিন্যাসের’ জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তাতে আইসিএক্স বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর ফলে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। 

ভয়েসটেল চিফ অপারেটিং অফিসার মুস্তাফা মাহমুদ হোসেন, বাংলা আইসিএক্স পবিচালক হাসিবুর রহমান, বাংলাটেলিকম সিইও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আব্দুল হান্না (অব), ইমাম নেটওয়ার্ক লিমিটেড সিইও এম নুরুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।