টোকিও থেকে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তায় চায় ঢাকা: শফিকুল আলম


বাংলাদেশ জাপান থেকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা এবং অতিরিক্ত ২৫ কোটি ডলার রেল খাতে সহায়তা প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার অংশ হিসেবে অন্যান্য খাতেও জাপানের সহায়তা পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস বুধবার (২৮ মে) ভোরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চার দিনের সরকারি সফরে জাপানের উদ্দেশে রওনা হবেন। তিনি ৩০তম নিক্কেই ফোরাম ‘ফিউচার অব এশিয়া’-তে অংশগ্রহণ করবেন এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর,’ বলেন প্রেসসচিব। ‘বাংলাদেশ জাপান থেকে ১ বিলিয়ন ডলার সফট লোন হিসেবে চেয়েছে এবং দুই নেতার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও নোট বিনিময় স্বাক্ষরিত হবে।’
মঙ্গলবার (২৭ মে) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহম্মাদ ফয়েজ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জাপানে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমাদের লক্ষ্য ১ লাখ দক্ষ কর্মী পাঠানো।’
‘প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ, বিশেষ করে ভাষা শিক্ষা নিশ্চিত করে তাদের দ্রুত পাঠাতে চায় সরকার। এটি প্রধান উপদেষ্টার অগ্রাধিকারভুক্ত বিষয় এবং বাংলাদেশ এ খাতটি নিয়ে কাজ করছে।’
শফিকুল আলম বলেন, এছাড়াও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে—একটি জেট্রো ও জাইকা আয়োজিত বিনিয়োগ বিষয়ক সেমিনার, যেখানে দুই দেশের শতাধিক ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করবেন। অন্যটি হবে দক্ষ শ্রমিক বিষয়ে, যা বাংলাদেশ পক্ষ আয়োজিত এবং এতে জাপানি সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণ থাকবে।
উভয় সেমিনারে কিছু সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবে বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা এরইমধ্যে মাতারবাড়ি অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। উপকূলীয় এই এলাকাকে দেশের প্রধান শিল্প ও রপ্তানিমুখী ফ্রি ট্রেড জোনে পরিণত করার লক্ষ্যে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সোমবার রাজধানীর স্টেট গেস্ট হাউস যমুনায় এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অধ্যাপক ইউনুস মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআইডিআই) প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।
তিনি বলেন, এই এমআইডিআই অঞ্চল উন্নয়ন তার আসন্ন জাপান সফরের মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর একটি হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৩০ মে টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন এবং মূল প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা করবেন।
“আমরা মাতারবাড়িকে দেশের বৃহত্তম বন্দর, লজিস্টিকস, শিল্প ও জ্বালানি হাবে পরিণত করতে চাই। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের ব্যাপক বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন,” বলেন তিনি।
তিনি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কথা তুলে ধরে বলেন, এই বিনিয়োগ বাস্তবায়নের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান অপরিহার্য।
জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এটি হবে অধ্যাপক ইউনুসের প্রথম জাপান সফর। এর আগেও তিনি একাধিকবার জাপান সফর করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ২০০৪ সালে নিক্কেই এশিয়া প্রাইজ পুরস্কার গ্রহণ এবং ২০০৭ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘অপিনিয়ন লিডার ইনভাইটেশন প্রোগ্রাম’-এ অংশগ্রহণ।
তিনি টোকিও সময় বুধবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন এবং শনিবার দেশে ফিরবেন। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী জানান, ৩০ মে টোকিওতে প্রধান উপদেষ্টা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
‘এই বৈঠকে বাংলাদেশ-জাপান কৌশলগত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে—বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন,’ বলেন তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যুটিও আলোচনায় থাকবে বলে জানান রুহুল আলম সিদ্দিকী।
প্রধান উপদেষ্টাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘এই সফরের মূল ফোকাস হচ্ছে বাজেট সহায়তা।’ পাশাপাশি কৌশলগত সব বিষয় আলোচনা হবে। সফরে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হতে পারে বলেও জানান তিনি।
২৮ মে জাপান-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী লীগের সভাপতি তারো আসো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
তিনি নিপ্পন ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ইয়োহেই সাসাকাওর আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন, যেখানে জাপানি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত থাকবেন। নৈশভোজের পর প্রধান উপদেষ্টা জাপানি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ সভায় অংশ নেবেন।
২৯ মে নিক্কেই ফোরামের উদ্বোধনের আগে নিক্কেই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে অধ্যাপক ইউনুস ‘এক অস্থির বিশ্বে এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বিষয়ের ওপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন এবং বিশ্বকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাবেন।
জাইকার প্রেসিডেন্ট ড. তানাকা আকিহিকো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে জাইকার ভবিষ্যৎ সহযোগিতা এবং চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় ভাইস-মিনিস্টার ইকুইনা আকিকো অধ্যাপক ইউনুসকে এই নিক্কেই ফোরামে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনি ২০০৪ সালে নিক্কেই এশিয়া প্রাইজ পান।
সফরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, খাতভিত্তিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক বিনিময়, রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলো আলোচিত হবে।
‘জাপান-বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারত্ব’-এর অধীনে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।