‘প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ, বাড়ছে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি’

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৫ মে ২০২৫, ০২:৪৯ পিএম
‘প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ, বাড়ছে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি’
ছবি : সংগৃহীত

দৈনিক অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে দেশে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার (৫ গ্রাম) চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে প্রতিবছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (১৪ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের লবণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. আহমাদ খাইরুল আবরার।

প্রবন্ধে বলা হয়, উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণের একটি বড় উৎস হলো প্রক্রিয়াজাত খাবার। এসব খাবার স্বাদে নোনতা না হলেও লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত লবণ নীরব ঘাতকের মতো দেশে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের মহামারি সৃষ্টি করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে একটি সমন্বিত জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল গ্রহণ করা এবং খাদ্যের মোঢ়কের সামনে ‘ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং’ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। খাদ্য মোড়কের সামনে সহজবোধ্যভাবে দেওয়া ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলের মাধ্যমে ভোক্তারা সহজেই লবণ, চিনি ও চর্বির মতো স্বাস্থ্যহানিকর উপাদানের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যকর পণ্য বেছে নিতে সক্ষম হবেন।

অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, লবণ শুধু স্বাদের উপাদান নয়, অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগসহ অসংক্রামক রোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি জাতীয় পাঠ্যক্রমে লবণের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান; যাতে শিশুদের মধ্যে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মো. ইফতেখার বলেন, অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, কিন্তু বোধগম্য লেবেলিং না থাকার কারণে জনগণ তা বুঝে উঠতে পারে না।

তিনি ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি মোড়কে পুষ্টি উপাদানসমুহের সঠিক তথ্য প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকার বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কার্যপরিকল্পনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে চলেছে। সম্প্রতি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি উদ্যোগে জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মোড়কীকরণ আইন অনুযায়ী খাদ্যের মোড়কে লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক হলেও অনেক কোম্পানি তা করে না, অথবা এমনভাবে উল্লেখ করে যা ভোক্তারা পড়তে পারে না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মোড়কীকরণ আইন সংশোধন করে সহজবোধ্য ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যভ্যাস পরিবর্তনের বিকল্প নেই। তিনি দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দেশের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারি-বেসরকারি সবার সমন্বিত উদ্যোগোর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সরকারের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পিএম-১ ডা. নজরুল ইসলাম, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভেকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, জাতীয় পুষ্টিসেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আজমেরী শারমিনসহ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।