মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, দুশ্চিন্তায় জেলেরা

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, দুশ্চিন্তায় জেলেরা

চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের জেলে ছলেমান সরদার। প্রায় ৩০ বছর ধরে পদ্মা-মেঘনার বুকে ইলিশ ধরে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। নদীর ঢেউয়ের মতোই তার জীবনের প্রতিটি দিন উত্থান-পতনের গল্পে ভরা। জীবনের সঙ্গে লড়াই করাই তার নিত্যদিনের অভ্যাস।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান। এ সময়ে নদীতে নামা যাবে না, জাল ফেলা যাবে না। অথচ এ সময়টুকু ছলেমানের মতো হাজারো জেলের পরিবারের কাছে হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন। সংসারের চাকা থেমে যায়, দুশ্চিন্তা গ্রাস করে পরিবারকে।

সরকার থেকে খাদ্য সহায়তার ঘোষণা থাকলেও সেটি সঠিকভাবে পান না বলে অভিযোগ ছলেমানের। আর যে সামান্য সহায়তা মেলে, তা দিয়ে সংসার টানা যায় না।

স্ত্রী-সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, খাদ্য পাই, কিন্তু তা দিয়ে কি ২২ দিন চলে? সংসার তো শুধু ভাতেই চলে না, ওষুধ লাগে, নুন-তেল লাগে, স্কুলে পড়া বাচ্চাদের খরচ লাগে। বাধ্য হয়ে ধারদেনা আর কিস্তির টাকা তুলে জীবন কাটান তারা। নদীতে নামতে না পারার কষ্টের পাশাপাশি দেনার দায় মাথায় নিয়ে রাতগুলো আরও ভারী হয়ে ওঠে।

প্রতিবারের মতো এবারও ছলেমান সরদারের দাবি, শুধু খাদ্য নয়, সরকারের পক্ষ থেকে নগদ অর্থসহ প্রকৃত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হোক। তাহলে হয়তো নদী না নামার এ ২২ দিন কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে কাটাতে পারবেন তারা।

সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর এলাকার আরেক জেলে মো. কাশেম বলেন, সরকার আমাদের চাল দেয়, তা দিয়ে আমাদের কিছু হয় না। আর চাল দেওয়ার সময় ৫-৭ কেজি কম দেয়। তারপর সরকার বাচুর, সেলাই মেশিনসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম দেয় কাদের আমরা বলতে পারি না। প্রকৃত জেলেদের আগে সহায়তা করতে হবে। মাথায় এখন আমাদের দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে। ২২ দিন কীভাবে কাটাবো আল্লাহ জানেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, চাঁদপুরে ৪৫ হাজার ৬১৫ নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। তাদের যথাসময়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে মা ইলিশ না ধরার জন্য সচেতনতামূলক সভা সমাবেশ করেছি। আশরা করছি জেলে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিদিন নদীতে অভিযান চলবে।

তিনি আরও বলেন, জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে এই বছর ৫ কেজি বাড়িয়ে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। চালের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার বিষয়ে সরকারের কাছে আমরা তুলে ধরেছি। আশা করছি সহসা খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তাও করা হবে। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের এ অভিযানে জেলেদের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।