৬০ কোটি টাকার ২৩ একর জমি ফিরলো সরকারের হাতে

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১০ পিএম
৬০ কোটি টাকার ২৩ একর জমি ফিরলো সরকারের হাতে
ছবি : সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী ফেরিঘাট সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে প্রায় ২৩ একর জমি প্রায় ৭০ বছর ধরে বেদখল অবস্থায় ছিল। ১৯৪৭ সালে ইন্ডিয়া ভাগের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকরা ইন্ডিয়াতে চলে গেলে এ জমি অব্যবস্থাপনার সুযোগে স্থানীয় শতাধিক পরিবার চাষাবাদ শুরু করে।

২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর লোকজন কৃষকদের কাছ থেকে জমি দখলে নিয়ে অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করে। পরে ৫ আগস্ট বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও জমি দখলে যায়, ফলে এলাকায় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়।

এমন খবর পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা কঠোর নির্দেশ দেন আড়াইহাজার উপজেলা প্রশাসনকে, যেন এক ইঞ্চি জমিও আর বেদখল না হয়। জমিটি মালিকবিহীন হিসেবে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেন তিনি।

আড়াইহাজার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নঈম উদ্দীন বলেন, “সব দাবিদারকে কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরে শুনানিতে যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, সবাই ভুয়া মালিক। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করেছি।” জমিটি বাজার মুল্য আনুমানিক ৬০ কোটি টাকা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস কে মো: মামুনুর রশীদ দ্রুত এ সংক্রান্ত ফাইল জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান। পরে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার  (সেপ্টেম্বর ১৬) নথিতে স্বাক্ষর করে জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ দেন।

জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, “এই জমিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে ভবিষ্যতে জমিটি আর বেদখল হবে না। পাশাপাশি স্থানীয়রা পর্যটন সুবিধা থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।”

স্থানীয় বিশনন্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল হামিদ বলেন, “আমার দাদা-বাবা এ জমিতে চাষ করতেন। কিন্তু ২০২০ সালে সাবেক এমপি নজরুল ইসলামের লোকজন আমাদের কাছ থেকে জমি বেদখল করে নেয়। সরকার যদি ইকোপার্ক করে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই—শুধু চাই, আর যেন প্রভাবশালীরা দখল করতে না পারে।”

বিশনন্দী ফেরিঘাট জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমান জানান,“এখানে দীর্ঘদিন আমরা শতাধিক পরিবার ভোগদখল করে আসছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় জমি আমাদের কাছে থেকে বেদখল হয়। সরকার যদি এখন নিজের নামে জমি নিয়ে থাকে, তাতে কোনো আপত্তি নেই। তবে যেন আর দখলদারি না হয়।”

প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, কানুনগো ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর প্রতিবেদন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুপারিশ  যাচাইয়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ অনুযায়ী জমিটি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম।