ফেনীতে নদীর করাল গ্রাসে বিদ্যালয় ভবন


ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার কাটাখালী নদীর ভাঙনে মাতুভূঞা ইউনিয়নের করিম উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিপাত ও নদীর তীব্র স্রোতে ধুয়ে গেছে ভবনের নিচের মাটি। এতে ভবনের উত্তর পাশের একটি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে যেকোনো সময় ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ভবনটি।
এমনকি ভাঙন অব্যাহত থাকায় যেকোনো সময় পুরো ভবনটি নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের অংশ ভেঙে নদীর দিকে ঝুলছে এবং ভবনের পাশে লাগোয়া শহীদ মিনারের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে।
শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টির কারণে নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা রহিম উল্যাহ চৌধুরীর দুই ছেলে তারেক মাহতাব রহিম ও জাবেদ সালাম রহিম তাদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে ২০১৬ সালে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ করেন। ভবনটিতে সপ্তম শ্রেণির পাঠদান ছাড়াও নবম ও দশম শ্রেণির গ্রুপ বিষয়গুলোর পাঠদান, বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ও ছাত্রীদের জন্য নামাজ স্থান রয়েছে।
দশম শ্রেণির ছাত্র আদনান বিন আলম বলে, ওই ভবনে আমাদের দশম শ্রেণির গ্রুপ বিষয়গুলোর পাঠদান চলে। কখন পুরো ভবন নদীতে তলিয়ে যায়, তা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। বিদ্যালয়ের এই ভবনটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
অভিভাবক মিনাল দাসগুপ্ত বলেন, নদী ভাঙনের খবর শুনে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুরো ভবন ধসে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সন্তান নিয়ে চিন্তিত আছি। এ বছর বন্যা হলে বিদ্যালয় ভবনটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ভাঙন রোধে কয়েক বছর আগে জেলা পরিষদ থেকে গার্ড ওয়াল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এবারের প্রবল বৃষ্টির পর তীব্র স্রোতে সেখানে গার্ড ওয়ালের আর অস্তিত্ব নেই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম বাছির ভূঞা বলেন, নদীর ভাঙনের কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যেকোনো সময় ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, এটি একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে আছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাঈন উদ্দিন আজাদ বলেন, ভবনটি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নদীর তীরে ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি, না হলে প্রবল বৃষ্টির স্রোতে যেকোনো ভবনটি ধসে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ভবনটিতে এখন আর পাঠদান করা সম্ভব নয়। তাই পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা কামনা করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয় ভবনটি দেখে এসেছি। নদী ভাঙনের কারণে ভবনটির একটি অংশ ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনটিতে পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ইউএনও শাহীদুল ইসলাম বলেন, ভাঙন থেকে বিদ্যালয়ের ভবনটি রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফুয়াদ হাসান বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। কাজ শিগগিরই শুরু হবে। শুরু হলেই নদীতীরের ভাঙন রোধ করা হবে।