কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘গুচ্ছ বসতভিটা’


কুড়িগ্রামের বন্যাপ্রবণ নদ-নদীবিধৌত চরাঞ্চলে টিকে থাকার লড়াইয়ে নতুন করে আশার আলো জাগিয়েছে ‘গুচ্ছ বসতভিটা’। বন্যা মোকাবিলায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীরবর্তী চরবাসীর যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠছে এসব উঁচু বসতভিটা। প্রতিটি বসতভিটায় ৫ থেকে ১০টি পরিবার একসঙ্গে বসবাস করে যা বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
সমতল থেকে ৮-১০ ফুট উঁচুতে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব বসতভিটা। ১৫ থেকে ২৫ শতক জমিজুড়ে নির্মিত একেককটি গুচ্ছ বসতভিটা নির্মাণে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
কুড়িগ্রামে বর্তমানে চরের সংখ্যা প্রায় ৪৬৯টি। এসব চরের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে গুচ্ছ বসতভিটার এই অভিনব মডেল।
এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলার চর মনতলার মিজানুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘গত বছর আমরা দশটি পরিবার মিলে ২৫ শতক জমিতে গুচ্ছ বসতভিটা তৈরি করি। এতে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। বন্যার সময় যখন চারপাশ ডুবে যায়, তখন আমাদের ভিটা নিরাপদ থাকে। আশেপাশের অনেক পরিবারও এসে তখন আশ্রয় নেয়।’
তিস্তা বিধৌত উলিপুর উপজেলার চর বজরা এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘আমরা পাঁচটি পরিবার মিলে গত তিন বছর ধরে গুচ্ছ বসতভিটায় বসবাস করছি। গাছপালা লাগিয়ে বসতভিটাটিকে আরও বাসযোগ্য করেছি। বন্যা ও ভাঙনের সময় একসঙ্গে থাকার কারণে নিজের মধ্যে সুরক্ষা ও সহমর্মিতাও বাড়ে।’
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোড়কমণ্ডলের সেকেন্দার আলী (৭০) বলেন, ‘আগে প্রতি বছর বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যেত। আশ্রয় নিতে হতো স্কুল বা রাস্তার ধারে। এখন আটটি পরিবার মিলে তৈরি করা গুচ্ছ বসতভিটা আমাদের দুশ্চিন্তা দূর করেছে। আমাদের গুচ্ছ বসতভিটা ১০ ফুট উঁচু হওয়ায় পানিতে ডোবে না।’
একই চরের বাসিন্দা চাঁন মিয়া (৫৬) বলেন, ‘টাকার অভাবে একা বসতভিটা উঁচু করতে পারিনি। বন্যায় প্রতি বছর কষ্ট করতে হয়। এবার কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। সবাই মিলে একসঙ্গে গুচ্ছ বসতভিটা তৈরি করব।’
কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, ‘গুচ্ছ বসতভিটা চরের মানুষের জন্য কার্যকর হলেও অধিকাংশ পরিবার অর্থাভাবে এটি তৈরি করতে পারে না। তবে বন্যা এলেই বোঝা যায়, এর প্রয়োজনীয়তা কতটা। অথচ এ ব্যাপারে সরকারি সহায়তা খুবই সীমিত। তাই সব চরবাসীর জন্য সরকারি সহায়তায় গুচ্ছ বসতভিটা নির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, আমরা পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো চর বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয়ের দাবি নিয়ে চরের মানুষের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি, সরকার আমাদের চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি দ্রুত মেনে নেবে।’
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার সহ ১৬টি নদ-নদীর চর ও দ্বীপ চরে প্রায় ৬ লাখ মানুষ বাস করে। চরাঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে জেলা প্রশাসন কাজ করছে।’