মাদক–অস্ত্র ঠেকাতে কক্সবাজার রেলস্টেশনে ডগ স্কোয়াড


উদ্বোধনের এক বছর আট মাস পরও কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশনে যাত্রীসেবার জন্য নির্ধারিত অন্তত এক ডজন সুবিধা চালু হয়নি। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের ঝুঁকি। যাত্রী ও লাগেজ তল্লাশির জন্য এখন ভরসা করা হচ্ছে র্যাবের ডগ স্কোয়াডের ওপর।
কক্সবাজার শহরতলির চান্দেরপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর ১০১ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের সঙ্গে এই রেলস্টেশনও উদ্বোধন করা হয়। ছয়তলাবিশিষ্ট শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ২৩৬ কোটি টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, র্যাব–১৫–এর সদস্যরা দুটি প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করে যাত্রীদের লাগেজ তল্লাশি করছেন। ট্রেনের বগিতেও তল্লাশি চালানো হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৮০০–এর বেশি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
র্যাব–১৫–এর সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও সহকারী পুলিশ সুপার আ ম ফারুক বলেন, ‘রেলস্টেশনে এখনো লাগেজ স্ক্যান করার যন্ত্র স্থাপন হয়নি। বিভিন্ন সময়ে তথ্য আসে, কক্সবাজার থেকে রেলপথে ইয়াবা ও অস্ত্র পাচার হচ্ছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ডগ স্কোয়াড নিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাঁচটি অভিযানে মাদক বা অস্ত্র উদ্ধার না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, অভিযানের খবর পেয়ে পাচারকারীরা আগেভাগে সতর্ক হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ডগ স্কোয়াডের তল্লাশি অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজার রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। উভয় ট্রেনের ধারণক্ষমতা ৮০০ থেকে ৮৫০ জন। চট্টগ্রাম হয়ে আসা এসব ট্রেন কক্সবাজার থেকে আবার ঢাকায় যায় রাত ১১টা ও সকাল সোয়া ছয়টায়।
এ ছাড়া সকাল সোয়া ১০টার দিকে একটি লোকাল ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়, যার ধারণক্ষমতা ৬৫০ জন। ট্রেনটি রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া, চট্টগ্রামসহ ৯টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। তবে এসব স্টেশনে রেল পুলিশের তৎপরতা না থাকায় পাচারকারীরা সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘রেলস্টেশন দিয়ে ইয়াবা পাচারের তথ্য প্রায়ই পাই। অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে ইয়াবাও উদ্ধার করেছি। কিন্তু স্ক্যানিং যন্ত্র না থাকায় অনেক চালান ধরতে পারছি না। স্ক্যানার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৮ মে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের বগিতে তল্লাশি চালিয়ে চার হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পাচারকারীরা তখন পালিয়ে যায়। গত ছয় মাসে রেলস্টেশন ও আশপাশের এলাকায় চালানো ২০টির বেশি অভিযানে ২০ হাজারের বেশি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
রেলপথে মাদক পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বেড়েছে। রেলপথে মাদক পাচার অনেকটাই কমে এসেছে।
রেলস্টেশন আছে, নেই সেবা
২০১৮ সালের জুলাইয়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এটি সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পের কাজ দুটি ভাগে করে চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন এবং বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
রেলস্টেশন ভবনের নিচতলায় বসানো হয়েছে লাগেজ স্ক্যানার, তথ্যকেন্দ্র, চলন্ত লিফট, যাত্রী লাউঞ্জ, শিশু বিনোদনকেন্দ্র ও পদচারী–সেতু। ওপরের তলাগুলোয় রয়েছে শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, কনফারেন্স হল ও তারকা মানের হোটেলের ৩৯টি কক্ষ। তবে এসবের কোনোটিই এখনো চালু হয়নি।
রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ভবন এখনো রেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। নিচতলার কিছু কক্ষ ব্যবহার করছি।’
টিকিট কালেক্টর শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘স্টেশন ভবনের বাইরের গেট দিয়ে যাত্রীদের প্রবেশ–বের হওয়ার সময় চেকিং করতে সমস্যা হয়। স্ক্যানার না থাকায় লাগেজ তল্লাশিতে ঝামেলা হয়, যাত্রীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডাও হয়।’
ভবনের একমাত্র টয়লেটটিও যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। বসার বা নামাজের কোনো ব্যবস্থাও নেই।
ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকৌশলী রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমরা কাজ শেষ করেছি। রক্ষণাবেক্ষণের সময়সীমাও প্রায় শেষ। আগামী সেপ্টেম্বরে ভবনটি রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তখন পরিষেবা চালু হবে বলে আশা করা যায়।’