ক্যান্টিন-দোকানে ভিপি-জিএসদের জরিমানা, প্রশাসন বলছে ‘নিয়ম নেই’

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২১ পিএম
ক্যান্টিন-দোকানে ভিপি-জিএসদের জরিমানা, প্রশাসন বলছে ‘নিয়ম নেই’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিন ও দোকানের খাবারের মান নিয়ে বিভিন্ন সময়ই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ ও আপত্তি তোলেন। নানান সময় মানসম্পন্ন খাবার পরিবেশনের দাবিও ওঠে। তবে খাবার নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে এসব ক্যান্টিন-দোকানকে হল সংসদ নেতাদের জরিমানা আরোপ বা সতর্কতামূলক নোটিশ দেওয়ার তথ্য কমই নজরে আসে।

এবার তেমনটিই ঘটেছে। ঢাবির বিভিন্ন হলের সদ্য নির্বাচিত একাধিক হল সংসদ নেতার বিরুদ্ধে ক্যান্টিন মালিক বা দোকানদারদের জরিমানা করার অভিযোগ উঠেছে। তারা ‘এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে’ এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার করায় এরই মধ্যে বিষয়টি বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দোকানে খাবার সুস্বাদু করার টেস্টিং সল্ট রাখার অভিযোগে দুটি হলের দুজন দোকানদারকে জরিমানা করেন নবনির্বাচিত হল সংসদ নেতারা। অন্য একটি হলের দোকানিকে ভয় দেখানো বা হুঁশিয়ারি করার অভিযোগও রয়েছে।

হল সংসদ নেতারা এমনটি করতে পারেন কি না—এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এ ধরনের জরিমানা করার কোনো বিধান বা ক্ষমতা কারও নেই।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর মাস্টারদা সূর্যসেন হলের এক দোকানে এক কেজি টেস্টিং সল্ট মজুত রাখার অভিযোগে ওই হল সংসদের নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) আজিজুল হক দোকানদারকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ নিয়ে একটি লিখিত চুক্তিও হয়।

হল সংসদের ভিপি ও দোকানি ওবায়দুল হকের সই করা ওই চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, জরিমানার অর্থ তিনদিনের মধ্যে পরিশোধ না করলে দোকানের চুক্তিনামা বাতিলের জন্য হল প্রশাসনে সুপারিশ করা হবে। জরিমানার অর্থ হল প্রশাসনের মাধ্যমে আদায় করা হবে।

ভিপি আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা প্রথমে খাবারে টিস্টিং সল্ট ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে দোকানদার অস্বীকার করেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে দোকানে তল্লাশি চালালে একটি পলিথিনে এক কেজি সমপরিমাণ টেস্টিং সল্ট পাই। তখন দোকানদার খাবারে টেস্টিং সল্ট ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেন।’

জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ভিপি আজিজুল হক বলেন, ‘দোকানে তল্লাশি চালিয়ে টেস্টিং সল্ট পেয়ে দোকানদারকে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি, চিঠিও পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা কাজ করছি। জরিমানার অর্থ হল প্রশাসনই আদায় করবে।’

এছাড়া জহুরুল হক হলের টিনশেডের ক্যান্টিনে টেস্টিং সল্টের উপস্থিতি থাকায় এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন হলের নবনির্বাচিত জিএস খালেদ হাসান।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) হলের ক্যান্টিন পরিদর্শনকালে টেস্টিং সল্টের উপস্থিতি নজরে আসে খালেদ হাসানের। পরে এটিকে কেন্দ্র করে তিনি ক্যান্টিন মালিককে এক হাজার টাকা জরিমানার একটি নোটিশ দেন। তিনদিনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধসহ হল প্রশাসনের কাছে জবাবদিহির কথাও উল্লেখ রয়েছে নোটিশে।

খালেদ হাসান তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, টিনশেড ক্যান্টিনের মোস্তফা ভাইয়ের দোকানে ক্ষতিকর টেস্টিং সল্ট পাওয়ায় ১০০০ টাকা জরিমানাসহ তিন কার্যদিবসের মধ্যে হল সংসদের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই ধরনের ঘটনার তথ্য মিলেছে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। হলটির সদ্য নির্বাচিত সমাজসেবা সম্পাদক জহির রায়হান টেস্টিং সল্ট রাখার অভিযোগে এক দোকানদারকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দোকান পরিদর্শনের সময় জহির রায়হান ৬ নম্বর দোকানে টেস্টিং সল্ট পান। তখন তিনি দোকানিকে এ জরিমানা করেন।

জানতে চাইলে জহির রায়হান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দোকানিকে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার না করতে সতর্ক করা হচ্ছিল। তবুও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিনি তা ব্যবহার করে আসছিলেন।

তিনি বলেন, জরিমানার অর্থ এখনো আদায় হয়নি, তবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সঠিক কারণ দেখাতে ব্যর্থ হলে দোকানের বৈধতা বাতিলের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের খাবারে পচা গাজর, জুসে পচা পেঁপে ও তরকারিতে পাম অয়েল ব্যবহারের অভিযোগে ক্যান্টিন মালিকদের জরিমানার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হল সংসদের নবনির্বাচিত সমাজসেবা সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) হলের দোকান পরিদর্শনের সময় এসব অনিয়ম দৃষ্টিগোচর হলে তিনি ওই হলের বিভিন্ন দোকানদারকে জরিমানার হুঁশিয়ারি দেন।

মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমি দোকানদারদের সতর্ক করেছি। জরিমানার বিষয়ে হল প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। আমি তাদের লিখিত চুক্তি নিয়েছি যে, ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম করলে তারা প্রশাসনকে জরিমানা প্রদান করবে।’

‘আমি শুধু দোকানদারদের সতর্ক করেছি। প্রকৃত জরিমানার বিষয়টি হল প্রশাসন ঠিক করবে’- বলেন এই হল সংসদ নেতা।

এ ধরনের কার্যক্রমের বৈধতা বিষয়ে জানতে চাইলে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওরা (হল সংসদ নেতারা) নতুন তো। ওরা হয়তো বুঝতে পারে নাই। একটু বোঝার গ্যাপ আছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে। এ জিনিসটা নিয়ে ওদের সঙ্গে বসলে ঠিক হয়ে যাবে।’

তবে দোকান ও ক্যান্টিনে হল সংসদ নেতাদের যেকোনো জরিমানা আরোপ বা হস্তক্ষেপকে ‘এখতিয়ার-বহির্ভূত’ বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘জরিমানা তারা করতে পারে না। এটি তাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তারা যা করবে হল প্রশাসনের মাধ্যমে করবে। হল প্রতিনিধি হিসেবে এখানে তাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে এটিইতো তাদের কাজ। তবে সেটি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে।’