জাবি ছাত্রদলের দোয়া মাহফিলে দুই গ্রুপের দফায় দফায় উত্তেজনা, হাতাহাতি


বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনের পর ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও উত্যপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুর ১২টায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা জাবাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় পৌঁছালে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি এবং উত্তেজনা দফায় দফায় ছড়িয়ে পড়ে।
শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার পর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোঃ ইয়াহিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এবং জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের অনুসারীরা জাবি কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে পৌঁছান।
এ সময় ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী (পদবঞ্চিত) বাইক শোডাউন করে ক্যাফেটেরিয়ায় প্রবেশ করেন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের অনুসারীরা তাদের বাধা দেন। এরপর দুই গ্রুপ উত্যপ্ত বাক্য বিনিময় ও বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর ও সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিকসহ শীর্ষ পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেন। শীর্ষ পাঁচ নেতা তাদের অনুসারীদের সঙ্গে ক্যাফেটেরিয়ার নিচে অবস্থান নেন।
ছাত্রদলের একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতারা মূলত জাবি ছাত্রদলের দুই গ্রুপের অচলাবস্থা ও দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্যই ক্যাম্পাসে আসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলমের উপস্থিতিতে প্রক্টরিয়াল টিম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
এ সময় বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের পক্ষে জাবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এখানে সবসময় হাঙ্গামা, আন্দোলন, মিছিল, মিটিং চলে। তাই এখানে অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রয়োজন। কিন্তু অযোগ্যদের পদায়ন ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে যা বিপদজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, বহিষ্কৃত, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ও ভ্রূণহত্যাকারীদের দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে, যা লজ্জার বিষয়।’ অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
এরপর কেন্দ্রীয় নেতারা ক্যাফেটেরিয়ায় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পরই জাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মসজিদের বাইরে অবস্থান নেন।
দোয়া মাহফিল শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আবারও ক্যাফেটেরিয়ায় ফিরলে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা শাখার আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে বলেন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য সেক্রেটারি নাছির উদ্দীন নাছিরকে ক্যাফেটেরিয়ায় আসতে নির্দেশ দেন।
বহিরাগতরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে কেন্দ্রীয় নেতারা জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে শিক্ষক লাউঞ্জে প্রবেশ করেন।
ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ৮ আগস্ট জাবি ছাত্রদলের বর্ধিত আহ্বায়ক কমিটি ও হল কমিটি ঘোষণায় চিহ্নিত ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, বহিষ্কৃত, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও ভ্রূণহত্যাকারীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। তাই তারা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ শীর্ষ পাঁচ নেতাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।
জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘যারা বিদ্রোহ করছে তাদের মধ্যে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরাও রয়েছে। এরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাত্রদলের ইমেজ নষ্ট করছে। নতুন কমিটি নিয়ে অভিযোগ থাকলে জানালে সমাধান করা হবে।’
কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ইউএনবিকে বলেন, ‘ছাত্রদল একটি বৃহৎ সংগঠন। এত বড় কমিটি তৈরি করার সময় সবার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি এবং দ্রুতই ভালো সমাধান আশা করছি।’