বামপন্থি সংগঠনগুলো সব বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে: শিবির

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৬ আগস্ট ২০২৫, ১০:৪০ এএম
বামপন্থি সংগঠনগুলো সব বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে: শিবির

বামপন্থি সংগঠনগুলো সব বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ এনেছে ছাত্রশিবির। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) টিএসসিতে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যুক্ত থাকার অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর দণ্ড ও সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষনেতাদের ছবি প্রদর্শনী বন্ধ করতে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘৩৬ জুলাই’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনেকগুলো ইভেন্টের পাশাপাশি আমরা ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং তথাকথিত ‘‘বিচার’’ নামক রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার প্রকল্পকে তথ্য-প্রমাণসহ জনসমক্ষে উপস্থাপন করেছি। আমরা দেখিয়েছি—কীভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ভুয়া ও পাতানো বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।। এটি ছিল ফ্যাসিবাদের নির্মম ইতিহাস ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের অংশ।’

‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা গেছে— কিছু বামপন্থি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করতে মব সৃষ্টি করেছে এবং অশালীন আচরণ প্রদর্শন করেছে।’

মঙ্গলবার টিএসসিতে ছাত্র শিবির সংগঠনটির অভিভাবক সংগঠন জামায়াতের শীর্ষনেতাদের ছবি প্রদর্শন করে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই শীর্ষনেতাদের দৃশ্যমান বিতর্কিত ভূমিকা ও স্বাধীনতার বিরোধিতার সঙ্গে যুক্ত থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ করে। বিবৃতি পাঠিয়ে ঘটনার নিন্দা জানায় ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন। ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তীব্র সমালোচনা করেন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থীরা।

পরে রাতে ছাত্র শিবিরের ঢাবি শাখার প্রচার সম্পাদক মু. সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, ‘বামপন্থি দেউলিয়া কিছু ছাত্রসংগঠনের মবের মুখে বিচারিক হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত কিছু প্রদর্শনী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং সার্বিক শৃঙ্খলার কথা চিন্তা করে কিছু নির্দিষ্ট উপকরণ সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।’

‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই— বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সর্বদাই ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা রেখে এসেছে। অতীতেও রেখেছে, আজও রেখেছে।’

ছাত্র শিবির জানায়, প্রশাসনের অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে প্রদর্শনীর নির্দিষ্ট অংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সরিয়ে নিতে তারা বাধা দেয়নি, বরং সম্মান জানিয়েছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আজ স্পষ্ট ভাষায় বলছি— যে শাহবাগের হাত ধরে দেশে বিচারহীনতা, মব সংস্কৃতি, গুম-হত্যা ও বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছিল, যে শাহবাগের দৌরাত্ম্যে দেশের বিচারব্যবস্থা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, সে শাহবাগই আজ ইতিহাসের প্রান্তরে পরাজিত।

সংগঠনটি অভিযোগ করে, ফ্যাসিবাদ পতনের এক বছরের মাথায় ফ্যাসিবাদের দোসরদের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড ও বয়ানের পুনরুৎপাদন জুলাইয়ের স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে, জনবিচ্ছিন্ন চিহ্নিত বামপন্থি গোষ্ঠীকে কিছু গণমাধ্যমে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের মতামত বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে যা সম্পূর্ণ অসত্য; আমরা এ ঘটনারও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ছাত্র শিবিরের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা জানি— সত্য বলা সহজ নয়। আর ইতিহাসের গায়েব করা অধ্যায়গুলোকে সামনে তুলে ধরার চেষ্টাও বিপজ্জনক। তবু আমরা বলছি, বিচারের নামে সংঘটিত এই ফাঁসিগুলো বিচার নয়— রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের দায় শুধু হাসিনা সরকার নয়, শাহবাগপন্থি সুবিধাভোগী বামপন্থিরাও এ দায় এড়াতে পারে না।

ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের শীর্ষনেতারা সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।