নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ বিএনপি

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২৭ মে ২০২৫, ১০:০১ পিএম
নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় হতাশ বিএনপি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করার পর এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা না করায় গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার (২৭ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের এ হতাশার কথা জানান।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যে বিবৃতি উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে—সেটি অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর।

বিএনপিরি এই নেতা বলেন, ‘আমরা কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করিনি, এখনো করছি না। তবে আমরা শুরু থেকেই ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আসছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।’

রাজনৈতিক উত্তেজনা ও নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার(২৫ মে) তার সরকারি বাসভবন যমুনায় আলাদাভাবে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন।

পরের দিন তিনি আরও ২০টি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বৈঠকের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি এই সংবাদ সম্মেলন করে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন,‘ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনের চেতনা ধারণ করে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার গঠন করা, যা মানুষের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।’

‘অন্যথায়, জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে,’ বলেন, বিএনপির এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এর পর রমজান, বর্ষা ও এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার মতো বিষয়গুলো রয়েছে, যা নির্বাচনকে ব্যাহত করতে পারে। আমরা সম্প্রতি এটি বলছি তা নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা বলছি।’

বিএনপির নেতা অভিযোগ করেন, নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য বিভিন্ন অজুহাত দেওয়া হচ্ছে—যেমন সংস্কার কার্যক্রম, বিচার প্রক্রিয়া ইত্যাদি। তিনি বলেন, ‘সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, তাই এটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমান্তরালভাবেই চলতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারী শক্তি ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার চলবে, তবে তা স্বাধীন বিচার বিভাগের অধীনে হওয়া উচিত।

তিনি সমালোচনা করে বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ এনইসি বৈঠকের পর যে বিবৃতি দিয়েছে, সেটি অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। আমরা শুরু থেকেই উপদেষ্টা পরিষদকে তাদের দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরাজিত শক্তি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের উসকানি ও বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের কারণে সরকার তার দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা বলছি, কেবল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই পারে এসব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে।’

তিনি বলেন, সরকারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবিলম্বে অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিৎ- এর কোনো বিকল্প নেই।’

বিএনপি আশা প্রকাশ করে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যেন জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে দেশ চালায়, যাতে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে থাকে এবং বিনিয়োগ, ব্যবসা ও বাণিজ্যে গতি আসে।


বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকারের নিরপেক্ষতার অভাব এবং শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা জনমনে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন রোধে এবং সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষায় বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ জরুরি।’

মোশাররফ বলেন, ‘মানুষ রক্ত দিয়েছে ফ্যাসিবাদ হটিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে, কিন্তু সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ড জনমনে আবারও প্রশ্ন তুলেছে।’

ইশরাক হোসেনের শপথে বিলম্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় এলেও সরকার এখনও তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়নি। ‘আমরা আশা করি, সরকার আর দেরি না করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও হাফিজউদ্দিন আহমেদ।