‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা: মির্জা ফখরুল


রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের শেখ বাজারে আয়োজিত গণসংযোগ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ একটা খবর দেখে চিন্তিত হলাম। বাংলাদেশের যে বৈদেশিক উপদেষ্টা তৌহিদ সাহেব, তিনি বলছেন, ‘‘আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমরা একটা হিউম্যানিটরিয়ান প্যাসেজ, মানবিক একটা প্যাসেজ দিতে চাচ্ছি।’’ অনেক কঠিন কথা, বোঝানো মুশকিল হচ্ছে। অর্থাৎ ওখানে (রাখাইন) যাওয়া যায় না তো, এখন আমাদের বাংলাদেশের চিটাগাং দিয়ে যাওয়া যাবে। ওখানে গিয়ে যোগাযোগ করা যাবে। এখন যোগাযোগ করার জন্য তারা এখন ওখানে হিউম্যানিটরিয়াল প্যাসেজ দিচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি একটু। গাজায় যুদ্ধ হচ্ছে না? গাজায় শুধু বোমা ফেলছে ইসরাইল, তাই না? ওখানে তো কেউ যেতে পারে না। জাতিসংঘ থেকে খাবার, ওষুধ—এসব পাঠাতে হলে জর্দান থেকে অথবা মিসর থেকে রাস্তা তৈরি করে ওই দিক দিয়ে খাবার ও ওষুধ গাজায় পাঠানো হচ্ছে। ভালো কথা, এটা মানবিক কারণে দরকার আছে। তবে আমার কথা হচ্ছে, আজ বাংলাদেশকে ওই জায়গায় পৌঁছাতে হলো, যে বাংলাদেশকে একটা হিউম্যানিটরিয়াল প্যাসেজ দিতে হচ্ছে। এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা জড়িত আছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের উচিত ছিল, দায়িত্ব ছিল এই বিষয়টা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলা। এটা কথা না বলে তারা (সরকার) এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে হিউম্যানিটরিয়াল প্যাসেজ দেওয়ার জায়গা দিচ্ছে। মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে।
‘আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা আরেকটি যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। আমাদের এখানে এসে আরও কেউ গোলমাল করুক, সেটিও আমরা চাই না। একে তো আমরা রোহিঙ্গা নিয়ে বড় সমস্যায় আছি, তার ওপর প্যাসেজ দেওয়া নিয়ে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয় এ জন্য আলোচনা করে এটাতে যাওয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি।’
সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে—এই প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা ছিল, এতে সরকার চুরির সুযোগ পেত। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা রাজার মতো হয়ে যাচ্ছিল। ওই জায়গাগুলো পরিবর্তন করা দরকার। আমরাও ওটা ভেবে ৩১ দফা সংস্কারের কথা বলেছি। আমরাও সংস্কার চাই। তবে আমরা এটাও চাই যে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের ব্যবস্থাও হোক। আমরা আশা করব, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা বলেছে যে, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করবে। আমরা বলি, ভেক কথা না বলে পরিষ্কার করে বলেন নির্বাচনটা কবে হবে। একটা রোডম্যাপ দেন।’
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা নুর করিম, আবু তাহের, আল মামুন আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাফরুল্লাহ, সদর থানা বিএনপির সভাপতি আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন।