৬ আন্তর্জাতিক সংগঠনের চিঠি, সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩০ এএম
৬ আন্তর্জাতিক সংগঠনের চিঠি, সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ

বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)সহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংগঠন। চিঠিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষা কার্যক্রম জোরদারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং দলটির নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রোববার এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে সই করা অন্য সংগঠনগুলো হলো– সিভিকাস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, ফোরটিফাই রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট। রোববার এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।  

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাত এখনও যথাযথ সংস্কার করা হয়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জবাবদিহি ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তার ব্যাপারে শতভাগ সাড়া মিলছে না। আগের শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত গুম, খুন ও নির্যাতনের বিচারে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। 

রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে চিঠিতে বলা হয়, জাতিসংঘের রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চস্তরের সম্মেলনে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অনুমতির কথা জানিয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার এখনও নিরাপদ নয়। চিঠিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) চলমান তদন্তে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ড. ইউনূসের উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে এবং বিগত ১৫ বছরে সংঘটিত গুরুতর নিপীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন। এসব অপরাধের মধ্যে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রশংসা করে চিঠিতে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় র‌্যাব ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে সব ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড প্রদান স্থগিত রাখার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা দেওয়া উচিত।

নিরাপত্তা খাত সংস্কারে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয় চিঠিতে। পাশাপাশি ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) ক্ষমতা সীমিত করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।  

গুমকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে চিঠিতে। বলা হয়, গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনকে সম্পূর্ণ ম্যান্ডেট সহায়তা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স প্রিভেনশন অ্যান্ড রেড্রেস অর্ডিন্যান্স’ খসড়া গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া প্যারিস নীতির আলোকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (এনএইচআরসি) সংস্কার করতে হবে।

সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার সীমিত করতে ব্যবহৃত নিপীড়নমূলক আইনগুলো বাতিল বা সংশোধনের পরামর্শ রয়েছে চিঠিতে। রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও অযাচিত নজরদারি রোধ করতে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করতে বলা হয়েছে। 

চিঠিতে বলা হয়, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক থেকে সুরক্ষা দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সংস্থা এবং অন্যান্য হয়রানি-সহিংসতা থেকে সাংবাদিকদের রক্ষা করতে হবে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের সামঞ্জস্যপূর্ণ যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করার আহ্বানও জানানো হয়।

নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক রোধ এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে– এমন সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। ২০২৪ সালের আগস্টের আগে ও পরের সব মামলা এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এসব মামলায় যারা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থক হিসেবে প্রমাণ ছাড়া দোষী অভিযুক্ত বা আটক হয়েছেন, তাদেরও যুক্ত করতে হবে।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে। এতে বলা হয়, বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অতিমাত্রায় সীমিত করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমে যুক্ত নেতাকর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরার পথ বাধাগ্রস্ত করবে এবং বাংলাদেশি ভোটারদের বড় অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।