ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় চলচ্চিত্র শিল্প
গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে নানা পরিবর্তন হচ্ছে এবং অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাদ যায়নি চলচ্চিত্র অঙ্গনও। তবে এখানে পরিস্থিতি এখনও অস্থির থাকায় অংশীদাররা অনিশ্চয়তার মুখোমুখি।
এই শিল্পের ব্যবসায়িক দিক কখন স্বাভাবিক হবে-এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় সিনেমাপ্রেমী, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, সংগীত শিল্পী, কারিগরী সদস্য, হল মালিক, পরিবেশক এবং এমনকি সাংবাদিকরাও।
দুয়েকটি ব্যতিক্রম ঘটনা ছাড়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বরাবরই ঈদ ও উৎসবকেন্দ্রিক। তবে চলতি বছর এ শিল্পের জন্য সবচেয়ে কঠিন বছরগুলোর মধ্যে একটি।
ঢালিউডের মেগাস্টার শাকিব খান অভিনীত 'তুফান' কোরবানির ঈদে বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল। তবে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে শেখ হাসিনার শাসনের পতন ঘটার পর অস্থিরতার কারণে থমকে যায় ঢাকার সিনেমা পাড়া।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনের এই সময়ে চলচ্চিত্রের শুটিং ও প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায়। ৫ আগস্ট দেশের বেশ কয়েকটি সিনেপ্লেক্স ও সিনেমা হল ভাঙচুর করা হয়।
এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর দীর্ঘদিনের সেন্সর বোর্ড ভেঙে দিয়ে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করা হয়। এছাড়া দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা শুরু হয় এবং এর পরপরই আরও কয়েকটি কমিটিও গঠন করা হয়।
এর মধ্যে সাতটি নতুন ঘোষিত কমিটি হলো-পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি, শর্ট-ফিল্ম অনুদান কমিটি, পূর্ণ-দৈর্ঘ্য এবং স্বল্প-দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদানের জন্য স্ক্রিপ্ট নির্বাচন কমিটি, পূর্ণ-দৈর্ঘ্য এবং স্বল্প-দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদানের জন্য উপকমিটি এবং ফিল্ম সার্টিফিকেশন আপিল কমিটি।
তবে দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর চলচ্চিত্র সেক্টর কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই এই মুহূর্তে অর্থ বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছেন না নির্মাতারা। এ কারণে অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী বর্তমানে বেকার এবং অসহনীয় অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন।
মানসম্পন্ন বাংলা চলচ্চিত্র এবং দর্শকের অভাবে সিনেমা হল মালিক ও মাল্টিপ্লেক্সগুলোও ভুগছে।
গত কয়েক বছরে সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে শুরু করে মাল্টিপ্লেক্স, 'পরাণ', 'হাওয়া', 'সুরঙ্গ', 'প্রিয়তমা', 'রাজকুমার'সহ বিভিন্ন ছবির টিকিটের লম্বা লাইন দেখা গেছে। এসব সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে সফল ছিল বলেও জানিয়েছেন প্রেক্ষাগৃহ ও হল মালিকরা।
তবে গত কয়েক মাস ধরে মানসম্মত বাংলাদেশি ছবি না থাকায় মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে চলছে বিদেশি সিনেমা। সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেক্লাবের মতো কয়েকটি হল ও প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র প্রদর্শন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এক ধরনের হুমকি তৈরি হয়েছে। এটি হলগুলোতে দর্শকের পর্যাপ্ত উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র সমালোচক, চিত্রনাট্যকার ও সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি ইউএনবিকে বলেন, ‘দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে ফিরিয়ে আনতে আমাদের বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পরিবেশের উন্নতির জন্য সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করা দরকার। অকার্যকর বিধিবিধান এবং দুর্নীতির মতো অনেক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী যে সংস্কারের জন্য এটিই সঠিক সময়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান কোন সিনেমাগুলো পাবে তা আরও নির্দিষ্টভাবে নির্বাচন থেকে শুরু করে, একটি কেন্দ্রীয় ই-টিটিটিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা, যাতে সব অংশীদার তাদের ন্যায্য পাওনা পায়; আমাদের এই শিল্পের পূর্ণাঙ্গ রূপান্তরের প্রয়োজন।’
খুব শিগগিরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের প্রথম প্যান-ইন্ডিয়া সিনেমা 'দরোদ' (হিন্দিতে 'দর্দ')। এটি হলে সিনেমাপ্রেমীদের ভিড় জমাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
অনন্ত মামুন পরিচালিত সিনেমাটি ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি পাবে এবং একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী ২০টি দেশে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।