1. হোম
  2. সারাদেশ

স্বাধীনতার পাঁচ দশকেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি ১৪ শহীদের

Staff Reporter
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
স্বাধীনতার পাঁচ দশকেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি ১৪ শহীদের

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা ঋষি সম্প্রদায়ের ১৪ জন শহীদের নাম আজও কোনো রাষ্ট্রীয় তালিকায় স্থান পায়নি। নেই কোনো স্মৃতিফলক বা সরকারি স্বীকৃতির দৃশ্যমান চিহ্ন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঋষি সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণেই এই শহীদ পরিবারগুলো দীর্ঘকাল ধরে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার।

জানা গেছে, কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের রাউৎহাট ঋষিপাড়ায় সংঘটিত এই গণহত্যার ঘটনা স্থানীয়ভাবে পরিচিত হলেও আজ পর্যন্ত এটি সরকারি নথিপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করা হলেও তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের স্থানীয় সহযোগী রাজাকারদের নিয়ে রাউৎহাট ঋষিপাড়ায় হামলা চালায়। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দেওয়া ও সহযোগিতা করার অভিযোগ ছিল। সেদিন ঋষি সম্প্রদায়ের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে বেয়নেট দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে তাদের মরদেহ রাস্তায় ফেলে রেখে যায় হানাদাররা।

স্থানীয় জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় শহীদদের মরদেহ একটি গণকবরে দাফন করা হলেও সেই গণকবরটি আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।

শহীদ জৌগেন্দ্র ঋষির ছেলে রাজকুমার ঋষি কান্নাভেজা কণ্ঠে জানান, ‘আমার বাবা ভাত খেতে বসেছিলেন। হঠাৎ রাজাকাররা এসে বাবাকে আরও ১৩ জনের সঙ্গে ধরে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি—সবার ওপর ব্রাশফায়ার চালিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দেওয়া ও সহযোগিতা করা।’

একই গ্রামের যুবক কনক কান্ত ঋষি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অথচ আজ তাদের নাম কোথাও নেই। আমরা ভিক্ষা চাই না, আমরা চাই ন্যায্য স্বীকৃতি।’

স্থানীয় যুবক জীবন ঋষি প্রশ্ন তোলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পরও যদি শহীদদের নাম রাষ্ট্রীয় তালিকায় না থাকে, তাহলে তা আমাদের জন্য চরম অপমান। শুধু ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষ বলেই কি তাদের ত্যাগ অস্বীকৃত থাকবে?’

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি নিজ চোখে সেই সময়ের অনেক ঘটনা দেখেছি। রাউৎহাট ঋষিপাড়ার মানুষরা কোনোদিন যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে ছিল না। তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, খবর পৌঁছে দিয়েছে। অবিলম্বে তাদের নাম রাষ্ট্রীয় তালিকাভুক্ত করা উচিত।’

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছামিউল ইসলাম বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। যাচাই-বাছাই শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও স্মৃতিফলক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’