সরকার সারা দেশে দ্রুতগতিতে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ করছে: আইসিটি সচিব

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫১ পিএম
সরকার সারা দেশে দ্রুতগতিতে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ করছে: আইসিটি সচিব
ছবি- সংগৃহীত

প্রবেশযোগ্যতাকে সেবা ডিজাইনের প্রারম্ভিক স্তর থেকেই বাধ্যতামূলক উপাদান হিসেবে যুক্ত করতে হবে। সরকার সারা দেশে দ্রুতগতিতে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ করছে; এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত প্রতিটি নতুন সেবাকে সূচনা থেকেই প্রবেশযোগ্য করে তৈরি করা।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিডা অডিটোরিয়ামে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ইনোভেশন টু ইনক্লুশন ইন দ্য ডিজিটাল এইজ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।

সেমিনারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বাংলাদেশের দ্রুত সম্প্রসারিত ডিজিটাল সেবাসমূহকে সম্পূর্ণ প্রবেশযোগ্য করতে সুস্পষ্ট ও সময়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, প্রবেশযোগ্যতা মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত কারণ যারা সহজ একটি অনলাইন কাজও প্রবেশযোগ্যতার জন্য নিজেরা সম্পন্ন করতে পারেন না, তারা প্রায়ই নিজেদের জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ও অবহেলিত মনে করেন।

এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোহা. আব্দুর রফিক সমাপনী বক্তব্যে বলেন, একক কোনো প্রতিষ্ঠান একা ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে পারবে না। বাস্তবভিত্তিক ও ন্যায্য সমাধান তখনই আসে, যখন নীতিনির্ধারক, প্রযুক্তিবিদ ও প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মীরা একসঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করেন।

সেমিনারে উপস্থাপিত নীতি-প্রস্তাবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য একটি রোডম্যাপ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম বছরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সাশ্রয়ী ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু, সব সরকারি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অ্যাক্সেসিবিলিটি অডিট, বিদ্যমান ডিজাইন গাইডলাইনসমূহের পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ এবং বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারী ও তরুণদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা ও অধিকারের ওপর প্রশিক্ষণ জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডেভেলপার ও সেবা প্রদানকারীদের জন্য ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটি বিষয়ক বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ এবং ডিজিটাল স্কিলস ট্রেনিং হাব প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।

দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বছরের মধ্যে সরকারি ভাতা ও ভর্তুকি কার্যক্রমে দূরবর্তী পরিচয় যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু করা, সহজে ব্যবহারযোগ্য ন্যাশনাল ডিজেবিলিটি হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং আর্থিক সেবার প্রবেশযোগ্যতা বৃদ্ধি, সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ এবং দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সহায়তা জোরদারের সুপারিশ করা হয়েছে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্মত ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে ওয়েব অ্যাক্সেসিবিলিটি মনিটরিং অথরিটি গঠন, মুক্তপাঠ ও নাইসসহ গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মসমূহে পূর্ণ প্রবেশযোগ্যতা নিশ্চিত করা এবং সব ধরনের সরকারি তথ্য জরুরি বার্তাসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য প্রবেশযোগ্য করে তোলার প্রস্তাব রয়েছে।

অনুষ্ঠানে এটুআই ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ যৌথভাবে “ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণ: বাংলাদেশের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশযোগ্যতা উন্নয়ন” শীর্ষক নতুন এক গবেষণা ও পলিসি ব্রিফ উপস্থাপন করে।

গবেষণাটি উপস্থাপন করেন ভাস্কর ভট্টাচার্য।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বিস্তৃত ডিজিটাল রূপান্তর উদ্যোগের অংশ হিসেবে এরমধ্যে এক হাজারের বেশি ই-সেবা চালু হয়েছে এবং প্রায় ৩৩ হাজার সরকারি ওয়েবসাইটকে সমন্বিত প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাস্তবে বহু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এসব সেবা ব্যবহার করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেকের জন্য সেবা এখনো কার্যত অপ্রবেশযোগ্য রয়ে গেছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, এটুআই, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, সমাজসেবা অধিদফতর, বিভিন্ন জাতিসংঘ সংস্থা, উন্নয়ন অংশীদার, মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্ম, সিভিল সোসাইটি, ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটি বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের প্রতিনিধিরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।