ব্ল্যাটার বললেন ‘ফিফা ছিল খুবই দুর্বল, আমিই একে বিশাল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছি’
টানা ১৭ বছর ফুটবলের আন্তর্জাতিক অভিভাবক সংস্থা ফিফার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন সেফ ব্ল্যাটার। ২০১৫ সালে দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। যদিও নিজেকে এখনও নির্দোষ দাবি করেন ব্ল্যাটার।
দীর্ঘদিন পর এবার তিনি সাক্ষাৎকার দিলেন ফিফার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। জানালেন কিভাবে একেবারে শূন্য থেকে ফিফাকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সে সঙ্গে আবার জানিয়ে দিলেন, সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে ফিফা এখন বিপথে পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৭৫ সালে সর্বপ্রথম ফিফার সঙ্গে যুক্ত হন সুইস নাগরিক সেফ ব্ল্যটার। তখন ছিলেন ফিফার ডিরেক্টর অব ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম। তিনি জানালেন, ওই সময়টায় ফিফা ছিল অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল। স্পন্সরদের কাছ থেকে কোনো অর্থই পেতো না। অ্যাডিডাস ছিল অফিসিয়াল স্পন্সর। তারা শুধু বল আর টি-শার্টই দিতো।
ওয়াটসনের সঙ্গে দেয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ব্ল্যাটারের এই বিষয়টা তুলে ধরে গোল ডটকম। ব্ল্যাটার বলেন, ‘আমি ফিফাকে একটি মনস্টারে পরিণত করেছি। আমি যখন ১৯৭৫ সালে ফিফায় কাজ শুরু করেছিলাম, তখন এটা ছিল একেবারেই দরিদ্র। অ্যাডিডাস ছিল স্পন্সর; কিন্তু তারা কোনো অর্থই দিতো না। তারা শুধু বল আর জার্সি দিতো।’
প্রথম কিভাবে স্পন্সরের কাছ থেকে অর্থ এনেছিলেন, সে অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন ব্ল্যাটার। তিনি বলেন, ‘১৯৭৬ সাল প্রথম ফিফা কোনো স্পন্সরের কাছ থেকে অর্থ আয় করে। প্রতিষ্ঠানটি ছিল কোকাকোলা। এরপর আসলে পাবলিক টেলিভিশন। যারা হঠাৎ করেই টিভিতে বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমতি দিয়ে দিলো। আর ফুটবল ছিল টেলিভিশনের জন্য সুপার প্রোডাক্ট এবং একটি সুপার শো। যেটা বিক্রি করে প্রচুর অর্থ আয় করার সম্ভাবনা তৈরি হয়।’
‘তবে, সত্যিকারার্থে ফিফায় অনেক বেশি অর্থ আনে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ। ২০১৬ সালে জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো প্রেসিডেন্ট পদে বসেছিলো, তখন তো তিনি বলতে গেলে একটি সাজানো বাসাতেই বসেছিলেন। টাকা আয়ের মেশিন তো তখন চলমান। এখন তিনি (ইনফ্যান্তিনো) সেই আয়কে আরও অনেক বেশি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে চলেছেন।’
তবে, অর্থের পরিমাণ বাড়াতে গিয়ে প্রতিযোগিতা এবং ফুটবল ম্যাচের যে পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটছে, তা নিয়েও শঙ্কিত সেফ ব্ল্যাটার। এতবেশি প্রতিযোগিতা এবং এতবেশি ম্যাচের কারণে ফুটবলের মান, দর্শক আগ্রহের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন তিনি। বিশেষ করে ফিফা এবং উয়েফা প্রতিযোগিতা করে টুর্নামেন্টের সংখ্যা বাড়িয়ে চলছে।
ব্ল্যাটার বলেন, ‘আমরা দেখছি ফুটবলকে বিক্রি করা শেষ। আর বিক্রি করার জায়গা নেই। যেমন ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন উয়েফা, তারা সাধারণত একটি চ্যাম্পিয়ন্স কাপ আয়োজন করতো। এখন রয়েছে চ্যম্পিয়ন্স লিগ ৩৬ দলের, ইউরোপা লিগ ৩৬ দলের, ইউরোপা কনফারেন্স লিগ ৩৬, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ, উয়েফা নেশন্স লিগ।’
২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে ৪৮ দলের। প্রায় অর্ধশতাধিক দেশের অংশগ্রহণ, ভাবা যায়! এর সঙ্গে আবার ২০২৫ সাল থেকে যুক্ত হচ্ছে ৩২ দলের ক্লাব বিশ্বকাপ। এগুলোর কারণে, অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রচুর রাজস্ব যোগ হবে ফিফার তহবিলে। তবে ব্ল্যাটার একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানিয়েছেন, এসব করতে গিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে ফুটবল সংস্থাগুলো।
ব্ল্যাটার পয়েন্টআউট করেছেন, এতবেশি টুর্নামেন্ট এবং ম্যাচের কারণে দর্শক-সমর্থকদের ব্যায় বেড়ে যাচ্ছে। সে সঙ্গে মাঠে এবং মাঠের বাইরে সহিংসতাও বাড়ছে। তিনি খুবই হতাশ হয়েছেন, ফুটবল যেখানে হওয়ার কথা ছিল সামাজিক বন্ধনের একটি অনন্য পীঠস্থান, এখন সেটা হয়ে দাঁড়িয়ে ঘৃণা এবং সহিংসতার জায়গা। তার কথা, প্রায় সব জায়গাতেই এখন মাঠে এবং মাঠের বাইরে সমর্থকদের মধ্যে অসহিষ্ণু আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফুটবলে যত অর্থ বাড়বে, তত সহিংসতাও বাড়বে। সঠিক দিক নির্দেশনা না পেলে এসব ঘটতেই থাকবে। সুতরাং, ফুটবলে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রয়োজন।