সচিবালয়ে ফায়ারের গাড়ি প্রবেশে হচ্ছে আলাদা গেট, সব ফ্লোরে বসছে বিশেষ দরজা
বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশিত:০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
ফায়ারের গাড়ি প্রবেশে হচ্ছে আলাদা গেট। ছবি: বাংলা পোস্ট
সচিবালয়ের অগ্নি-নিরাপত্তা জোরদারে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের জন্য হচ্ছে আলাদা গেইট। অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে পুরোনো ভবনগুলোতেও যুক্ত করা হচ্ছে আধুনিক অগ্নি-প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশ অনুযায়ী ধাপে ধাপে অপসারণ করা হচ্ছে আগুন নেভানোর পথে বাধা সৃষ্টি করা সেতুগুলো। সচিবালয়ের ভেতরে ভবনগুলোতে থাকা কানেক্টিং ব্রিজ ভাঙা হচ্ছে।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ঘটে ইতিহাসের অন্যতম বড় অগ্নিকাণ্ড। ভবনের চারটি তলা পুরোপুরি পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় পরের দিন সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ঘটে ইতিহাসের অন্যতম বড় অগ্নিকাণ্ড। ভবনের চারটি তলা পুরোপুরি পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় পরের দিন সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা।
এই ঘটনার তদন্তে ২৬ ডিসেম্বর একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের কমিটি স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদ মিলিয়ে মোট ৩৫টি সুপারিশ দেয়। তবে দীর্ঘদিন এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি ছিল না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এরপর গত ১৮ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে বড় অগ্নিকাণ্ডের পর সরকার নতুন করে অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সচিবালয়ের নিরাপত্তা জোরদারে শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ।
নতুন দুটি ভবনসহ সচিবালয়ে বর্তমানে ১৩টি ভবন রয়েছে। বেশিরভাগ ভবনের মধ্যে থাকা কানেক্টিং ব্রিজগুলো এতটাই নিচু ছিল যে, সচিবালয়ের ভেতরে ফায়ার সার্ভিসের উঁচু মইবাহী টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) ঢুকতে পারত না। বহুদিন ধরেই এসব সেতু অপসারণের অনুরোধ জানিয়ে আসছিল ফায়ার সার্ভিস।
অবশেষে গণপূর্ত বিভাগ এই সেতুগুলো ভাঙার কাজ শুরু করেছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দেখা গেছে—৫ থেকে ৬ নম্বর ভবন এবং ৬ থেকে ৭ নম্বর ভবনের সংযোগ সেতুর একাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।

পুরোনো ভবনগুলোতে অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ফ্লোরে ফায়ার সেফটি ডোর স্থাপনের কাজ চলছে। নতুন ভবনগুলোতে ইতিমধ্যেই এই ডোর রয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চারটি ফ্লোর পুনর্নির্মাণ করে সেখানে ফায়ার ডোর বসানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, সচিবালয় অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। পুরনো অনেক ভবনে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথভাবে ছিল না। আগুন লাগলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সবসময়ই ছিল। তাদের দেওয়া সুপারিশ অনুযায়ী সেতু অপসারণসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে—এটিকে তারা ইতিবাচক অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেন।
ইডেন ভবনের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুনতাসির মামুন বাংলা পোস্টকে বলেন, 'অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফায়ার সার্ভিসের উচ্চ মিটার লেডারসহ বড় গাড়িগুলো যেন নির্বিঘ্নে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারে, সেজন্যই কানেক্টিং ব্রিজগুলো অপসারণ করা হচ্ছে।
বর্তমানে এসব ব্রিজের উচ্চতা দুই তলার সমান উল্লেখ করে তিনি জানান, এগুলো ভেঙে পরবর্তী সময়ে তিনতলা উচ্চতায় পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এখনই যেন সব ভবনের পাশে দাঁড়াতে পারে, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, জিরো পয়েন্টের দিকে থাকা চার নম্বর গেইটের পাশে শুধু ফায়ার সার্ভিসের জন্য একটি বিশেষ গেট নির্মাণ করা হবে। গেটটি সবসময় বন্ধ থাকবে এবং কেবল অগ্নিকাণ্ডের সময় খোলা হবে। যাতে এটি দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে।
মুনতাসির মামুন জানান, ফায়ার ডোর স্থাপন করলে আগুন বা ধোঁয়া সিঁড়ির দিকে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না, ফলে বিপদে পড়া মানুষ নিরাপদে বের হতে পারবেন। দুই ঘণ্টা পর্যন্ত আগুন প্রতিরোধে সক্ষম এসব ফায়ার ডোর। পুরনো সব ভবনেই ফায়ার ডোর স্থাপন করা হবে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে ৬ নম্বর বহুতল ভবনে স্থাপন করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, সুপারিশ অনুযায়ী কানেক্টিং ব্রিজ ভাঙা হচ্ছে—এটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
কাজ শেষ হলে তারা পুনরায় পরিদর্শন করবেন বলেও জানান তিনি।
যেসব সুপারিশ দিয়েছিল কমিটি
• ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের উপযোগী করে গেট তৈরি ও প্রতিবন্ধক সেতু অপসারণ
• অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ
• ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে ক্লাস এ ফায়ার রেটেড উপকরণ ব্যবহার
• অভিজ্ঞ লোকবল ছাড়া বৈদ্যুতিক/যান্ত্রিক কাজ না করা
• স্থাপিত সরঞ্জাম নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ
• বছরে অন্তত একবার যৌথ মহড়া
• উন্নত বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
• কেপিআই এলাকাগুলোর জন্য বিশেষ শ্রেণির ফায়ার স্টেশন
• নতুন ভবনে ও রিনোভেশনে এনবিসি-২০২০ অনুসরণ
• ভূমিকম্প সহনীয়তা পরীক্ষা ও প্রয়োজনে রেট্রোফিটিং
বিপি/আইএইচ
