দেশে ফিরলে তারেক রহমানও কি ‘বিশেষ নিরাপত্তা’ পাবেন?
অন্তর্বর্তী সরকার মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘ভিভিআইপি’ ঘোষণা করেছে। এর পরই এদিন দুপুরের দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স বা এসএসএফ সদস্যরা কাজ শুরু করেছে।
এসএসএফ অধ্যাদেশে মূলত ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’কেই শারীরিক নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি বলা আছে। ওই একই অধ্যাদেশে ভিভিআইপি মানে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান ছাড়াও বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান কিংবা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষিত অন্য যে কোনো ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন আইনজীবীরা।
ফলে সরকার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণা করায় তিনি এসএসএফ সুবিধা পাচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন উঠেছে- খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে ফিরলে কি এসএসএফ-এর নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন?
যদিও তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন তা এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। কারণ তিনি নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, তার দেশে ফেরার বিষয়টিতে ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’।
তবে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকের পর দলটির মুখপাত্র ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন।
বিভিন্ন নেতাদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে নেওয়া সরকারের পদক্ষেপ থেকে অনেকের ধারণা- সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর মঙ্গলবার সকালে সংবাদ মাধ্যমকে বলছিলেন, তারেক রহমান দেশে ফেরার পর তার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে এসএসএফ সুবিধা দেওয়ার একটি প্রস্তাব সরকারকে দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের আছে।
যদিও বিএনপিরই একজন নেতা বলেছেন, রাষ্ট্র বা সরকার ঘোষিত ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার জন্য যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে, সেটি তার পরিবারের সদস্যদের জন্যও প্রযোজ্য হবার কথা বলে আমরা মনে করি।
এর আগে তারেক রহমান তার ফেসবুক পোস্টে তার দেশে ফেরার বিষয়টিতে তার একক নিয়ন্ত্রণ নেই জানানোর পর নিরাপত্তা বিষয়টিকেই এর প্রধান কারণ বলে অনেকে ধারণা করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে তিন ধরনের বিশেষ ব্যক্তি আছেন- ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সিআইপি। এর মধ্যে ভিভিআইপি ও ভিআইপি নির্ধারণ করা হয় রাষ্ট্রীয় বিবেচনায়। আর সিআইপি নির্বাচন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
দেশের প্রধান দুই ভিভিআইপি হলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। তাদের নিরাপত্তায় বিশেষভাবে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট আর স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স বা এসএসএফ কাজ করে থাকে। এছাড়া রাষ্ট্র কাউকে ভিআইপি ঘোষণা করলে তার ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা দেবে এসএসএফ।
এখন খালেদা জিয়াকে ভিভিআইপি ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারির পর ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় জড়িত সংস্থাগুলো তার জন্যও কাজ শুরু করবে। ফলে তার এসএসএফ সুবিধা পাওয়া এখন প্রায় নিশ্চিত।
জেনারেল এরশাদের শাসনামলে রাষ্ট্রপ্রধানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স গঠন করা হয়েছিল। পরে ১৯৯১ সালে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফেরার পর প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (পিএসএফ) সংশোধন করে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স এসএসএফ গঠন করা হয়।
এই এসএসএফকে আবার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার বা নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনে গুলি চালানোর মতো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
যদিও ফেরি আটকে রাখায় স্কুলছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার পর একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বলেছিল যে, ‘শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভিভিআইপি হিসেবে গণ্য, আর কেউ নন।’
অবশ্য আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অন্য কোনো ব্যক্তিকে ‘ভিভিআইপি’ ঘোষণার এখতিয়ার সরকারের আছে। সূত্র: বিবিসি
