প্রোটোকল মেনেই শহীদদের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে: সিআইডি প্রধান
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো অজ্ঞাত শহীদদের পরিচয় শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন, ফরেনসিক পরীক্ষা এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ।
রবিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে শহীদদের লাশ শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরুর আগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ছিবগাত উল্লাহ জানান, এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা (OHCHR)-এর মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে আগত আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিগত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অভিযান পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
সিআইডি প্রধান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রোটোকল—মিনেসোটা প্রোটোকল—অনুসরণ করে কবর উত্তোলন, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ স্যাম্পলিংসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করা হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মেডিকেল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি এবং বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ছিবগাত উল্লাহ নিশ্চিত করেন, আবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। মৃতদেহ উত্তোলনের পর পোস্টমর্টেম, হাড়ের নমুনা বা টিস্যু সংগ্রহ করে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে।
তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেন, ‘আনাসের মতো যারা দেশের জন্য বুকের রক্ত ঢেলে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই নাম-পরিচয়হীন শহীদদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির প্রতি আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।’
সিআইডি প্রধান জানান, পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে মরদেহগুলো পুনরায় দাফন করা হবে। এখন পর্যন্ত ১০ জন স্বজন তাদের প্রিয়জনের খোঁজে আবেদন করেছেন। তিনি আরও কেউ থাকলে সিআইডি হটলাইনে দ্রুত যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, ‘আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডি'র সঙ্গে কাজ করছি। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, এই কাজ আন্তর্জাতিক ফরেনসিক মানদণ্ড অনুসরণ করে করা হবে।’
ছিবগাত উল্লাহ সাংবাদিকদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুযায়ী মৃতদেহের কোনো ছবি বা সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও মানবাধিকার-সংশ্লিষ্ট কাজ। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকল শহীদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তিনি শহীদদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘অনেক বাবা-মা, ভাই-বোন বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন তাদের আপনজনদের পরিচয় জানার জন্য। আমরা চাই, এই জাতীয় বেদনার দায় থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারি।’
