জেলের সামনে ৩ বোনের অবস্থান ধর্মঘট, কেমন আছেন ইমরান খান?

Bangla Post Desk
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত:০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম
জেলের সামনে ৩ বোনের অবস্থান ধর্মঘট, কেমন আছেন ইমরান খান?
ইমরান খানের তিন বোন। ছবি: জিও নিউজ

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ায় আদিয়ালা জেলের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করছেন তার তিন বোন—আলিমা খান, নুরিন খান ও উজমা খান।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলের কাছে ফ্যাক্টরি চেকপোস্টে অবস্থান ধর্মঘটে বসে পড়েন তারা।

পুলিশ জানায়, জেলে সাক্ষাতের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যারিস্টার গওহর আলী খান, ইমরানের বোনেরা এবং দলের নেতাদের জেলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

ফ্যাক্টরি চেকপোস্টেই তাদের থামানো হয়। আলিমা খান ঘটনাস্থলে বারবার পিটিআই কর্মীদের শান্ত থাকতে বলেন। এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন—

‘পুলিশ আমাদের শত্রু নয়, তারাও চাপের মধ্যে আছে।’

আলিমা খান জানান, সেখানে নারীরা উপস্থিত থাকায় তিনি সমর্থকদের পেছনে রাখতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিবারকে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি দাবি করেন, গত বৈঠকে তার বোন কোনো রাজনৈতিক আলাপই করেননি।

আলিমা প্রশ্ন তোলেন— কোন আদেশে ইমরান খানকে ‘একাকী বন্দিত্বে’ (solitary confinement) রাখা হয়েছে?

পরিবারটি গত এক মাস ধরে কেবল সাক্ষাতের উদ্দেশ্যেই জেলের সামনে আসছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

দেখা করতে না দেওয়ার পর ইমরানের বোনেরা আবারও চেকপোস্টের পাশে বসে পড়েন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন এমএনএ জুনায়েদ আখতার, শাহিদ খাটক এবং খাইবার পাখতুনখাওয়া সরকারের সদস্য মীনা খান ও শফি জান।

এদিনও আদিয়ালা জেলের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ ছিল। সেখানে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এদিকে জেল এলাকার চারপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় গোরখপুর থেকে দাহগাল পর্যন্ত দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এলাকায় ১,২০০-এর বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল।

পৃথকভাবে পিটিআই নেতা আসাদ কায়সারও সাক্ষাত না দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত আইনবিরোধী।

আসাদ আরও বলেন, বিরোধী দলের নেতা নিয়োগ না করা ‘সংবিধানবিরোধী’ এবং আদালতসম্মত প্রক্রিয়ায় ইমরান খানের মুক্তি দিতে হবে।

তার বক্তব্য— কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও পিটিআই শেষ হয়ে যাবে না, যেমন অতীতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোকে বিলুপ্ত করা যায়নি। ‍

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আদিয়ালা জেলে বন্দি। পিটিআই ও সরকারের মধ্যে ইমরান খানের সাক্ষাৎ নিয়ে বহুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে।

গত সপ্তাহে উজমা খানকে একবার দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেটিই ছিল সর্বশেষ সাক্ষাৎ।

সম্প্রতি জেল এলাকার বাইরে পিটিআইয়ের বিক্ষোভ বেড়ে গেছে—কখনো পুলিশ-জেল স্টাফের সঙ্গে হাতাহাতিও হয়েছে।

গত মাসে কেপি মুখ্যমন্ত্রী সুহেল আফ্রিদি জেলের বাইরে ১৬ ঘণ্টার অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন। এর আগেও ইমরানের বোনেরা (আলীমা, নুরিন নিয়াজি ও উজমা খানুম) প্রতিবাদ করেছিলেন এবং সে সময় তাদের স্বল্প সময়ের জন্য আটকও করা হয়।

এরপর থেকেই পাকিস্তান সরকার ইমরান খানের সঙ্গে সব ধরনের সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

নিষেধাজ্ঞাটি আসে ঠিক সে দিনই, যখন আইএসপিআর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী ইমরান খানকে‘মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে মন্তব্য করেন।

 

এদিকে‘রাজনীতি শত্রুতা হওয়া উচিত নয়’ উল্লেখ করে পিটিআই নেতা ব্যারিস্টার গওহর রিজিভী দাহগাল চেকপোস্টে সাংবাদিকদের বলেন, ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিবারের আইনগত অধিকার, যা একাধিক আদালতের আদেশেও অনুমোদিত।

তিনি বলেন, এভাবে বাধা দিলে উত্তেজনা আরও বাড়বে এবং দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে।

তার মতে, রাজনীতি কখনোই শত্রুতায় রূপ নেওয়া উচিত নয়।

তার বক্তব্য— ‘পরিবার ও আইনজীবীদের সাক্ষাৎ করতে দিতে হবে। যখন আমরা পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে দেখা করব, তখনই তাকে বাইরে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানানো সম্ভব হবে।’

তিনি স্পিকার আয়াজ সাদিকের ইতিবাচক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইমরান খান আলোচনার ক্ষমতা মাহমুদ খান আচকজাই ও রাজা নাসির আব্বাসকে দিয়েছেন।

গওহর সতর্ক করে বলেন, বিশৃঙ্খলা জনগণকে হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। ‘পাকিস্তান পাঁচ গুণ বড় শত্রুকে পরাজিত করেছে—আমরা সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা স্বীকার করি। আবারও যদি সাক্ষাৎ চালু হয়, পিটিআই সামগ্রিক রাজনৈতিক উত্তেজনা কমাতে কাজ করবে।’সূত্র: জিও নিউজ