গাজায় থামছে না হাহাকার: প্রতিশ্রুত ত্রাণের ৭৫ শতাংশই বন্দি ইসরায়েলের হাতে

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫১ এএম
গাজায় থামছে না হাহাকার: প্রতিশ্রুত ত্রাণের ৭৫ শতাংশই বন্দি ইসরায়েলের হাতে
ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বটে, কিন্তু সেখানকার মানুষের ভাগ্যে নেমে আসা দুর্ভোগের ভার এতটুকুও কমেনি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ থামার কথা ছিল, কিন্তু ইসরায়েল প্রতিশ্রুত ত্রাণের মাত্র এক-চতুর্থাংশ প্রবেশ করতে দিচ্ছে—অর্থাৎ, তাদের হাতেই আটকে আছে জীবনদায়ী সামগ্রীর তিন-চতুর্থাংশ (৭৫ শতাংশ)।

আল জাজিরা রোববার তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্তকে নির্লজ্জভাবে পদদলিত করে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় গাজার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে নতুন করে হতাহতের আর্তনাদে। মানবিক সংকট সেখানে এখন এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের শনিবারের বিবৃতি যেন এক চরম হতাশার প্রতিচ্ছবি। তারা জানিয়েছে, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালে মাত্র ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে। দৈনিক হিসেবে তার পরিমাণ মাত্র ১৪৫টি। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী যেখানে প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ঢোকার কথা ছিল, সেখানে তারা প্রবেশ করতে পেরেছে তার মাত্র ২৪ শতাংশ।

বিবৃতিতে বুকফাটা আর্তি জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বাধা দিচ্ছে। এর ফলে ২৪ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সংকট ভয়াবহভাবে বেড়েছে। আর এই অমানবিকতার দায় সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের।’

দুই বছরের লাগাতার ইসরায়েলি হামলায় বহু পরিবার আজ আশ্রয়হীন, তাদের ঘরবাড়ি, তাদের স্মৃতি, তাদের পুরো এলাকা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। অগণিত মানুষ এখন মাথার ওপর ছাদ হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হকও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রুটের পরিবর্তন ত্রাণ কার্যক্রমকে সীমিত করে দিয়েছে। সংকীর্ণ, ক্ষতিগ্রস্ত ও যানজটপূর্ণ উপকূলীয় রাস্তা ধরে ত্রাণ বহনকারী কনভয়গুলোকে ঘুরতে হচ্ছে, যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বেশি সীমান্তপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট খোলার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

এদিকে, যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি ভেঙে ইসরায়েলি বাহিনী শনিবারও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকায় বিমান, কামান আর ট্যাংকের গোলাবর্ষণে নেমে এসেছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পূর্বদিকের কয়েকটি আবাসিক ভবনও গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানাচ্ছেন, খান ইউনিসে প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন কীভাবে “ইসরায়েলি ড্রোন আর ভারী গোলাবর্ষণে নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।” আকাশে ড্রোনের অবিরাম উপস্থিতি ও বোমাবর্ষণের কারণে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থাগুলিও বহু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না, ফলে বহু জীবন হয়তোবা অকালেই হারিয়ে যাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, তথাকথিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন। প্রতিটি সংখ্যা যেন এক একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গের কাহিনি, এক একটি নিষ্পাপ প্রাণের চিরতরে থেমে যাওয়া।