ফরিদপুরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ৪৭

Bangla Post Desk
বাংলা পোস্ট ডেস্ক
প্রকাশিত:০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৯ পিএম
ফরিদপুরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ৪৭
ছবি- সংগৃহীত

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৪৭ জন আহত হয়েছেন।

রোববার (২ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের গোপীনাথপুর ও ছোট হামিরদী গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে লিপ্ত দুই পক্ষের নারী-পুরুষ সবাই ঢাল, সড়কি, রামদাসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামিরদী ইউনিয়নের ছোট হামিরদী ও গোপীনাথপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন ছোট হামিরদী গ্রামের লিটন মাতুব্বর (৫৫) এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন গোপীনাথপুর গ্রামের কুদ্দুস মুন্সী (৬০)।

গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় লিটন মাতুব্বরের পক্ষের সাইমন শেখের সঙ্গে অপর পক্ষের নেতা কুদ্দুস মুন্সীর জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে পরস্পরকে গালিগালাজ করতে থাকেন। উপস্থিত লোকজন তাৎক্ষণিক তাদের নিবৃত্ত করেন।

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন ৩১ অক্টোবর সকালে দুই পক্ষ ঢাল, সড়কি, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। এ খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামের মুরব্বিরা এসে দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করে সালিশ বৈঠকের কথা বলেন। দুই পক্ষ সালিশে বসতে রাজি হয়।

আজ রোববার বিকেলে সালিশ বৈঠক বসার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক শুরুর আগেই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দুই পক্ষের শত শত লোকজন ঢাল, সড়কি, রামদা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে আহতদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত বাবুল মুন্সী (৫৪), বিপ্লব হোসেন (৪০), সবুজ শেখ (৩৪)সহ পাঁচজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে রয়েছেনশাহ আলম (২০), বিপ্লব মুন্সী (৪৫), তোহির উদ্দিন ফকির (৫০), সবুজ মুন্সী (৪৫), হৃদয় হোসেন (২৫), সাজ্জাদ মাতুব্বর (১৯), রাজিব হোসেন (২৫), সুজন মাতুব্বর (২৩), হায়দার মাতুব্বর (২২), আবুল মুন্সী (৬০), হাবিব মিয়া (৩৫), বাবুল মুন্সী (৫৪), বিপ্লব হোসেন (৪০), সবুজ শেখ (৩৪), শেখ বাবর আলী (৬৪), মোহাম্মদ দুলাল মাতুব্বর (৬৭) প্রমুখ।

হামিরদী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মিজান মুন্সী বলেন, গোপীনাথপুর গ্রামে সাইমন মাতুব্বর ও কুদ্দুস মুন্সীর মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ বিষয়ে আজ রোববার একটি সালিশ বৈঠক বসে। তবে বৈঠকে সমঝোতা না হওয়ায় দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেপরে ভাঙ্গা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তানসিভ জুবায়ের বলেন, সংঘর্ষে আহত হয়ে ৪৭ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত পাঁচজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে

তিনি আরও বলেন, আহতদের অধিকাংশের শরীরে দেশীয় অস্ত্রের আঘাত ও ইটের টুকরোর আঘাত রয়েছে। এ ব্যাপারে দুই পক্ষের কারও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ হোসেন বলেন, স্থানীয় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।