অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়নে সমবায় ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন: দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক বলেছেন , বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমবায় আন্দোলন একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ আর্থসামাজিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশে সমবায়ের ইতিহাস কেবল ৫৪ বছরের নয়। অভিবক্ত বাংলায় ১৯০৯ সালে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তার নিজ গ্রামে তদানিন্তন যশোর জেলায় (বর্তমানে খুলনার পাইকগাছায়) 'রাডুলী সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক' প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল অবিভক্ত বাংলায় প্রথম গ্রামীণ সমবায় ব্যাংক এবং এই ব্যাংকটি প্রান্তিক চাষি ও বর্গাচাষিদের মহাজনী ঋণ থেকে মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
শনিবার (১ অক্টোবর) চট্টগ্রামের শিশু একাডেমী মিলনায়তনে ৫৪ তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
'উপদেষ্টা বলেন, একতাই বল' এই মূলমন্ত্র আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। সেই সাথে পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও ত্যাগের মানসিকতা না থাকলে সমবায় অর্থহীন। বিশ্বাস ছাড়া সহযোগিতা হয় না, আস্থা ছাড়া সংগঠন টিকে না, আর ত্যাগ ছাড়া সমবায়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য বিকশিত হয় না। যখন একজন সদস্য নিজের সামান্য স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করেন, তখনই সমবায়ের প্রকৃত শক্তি প্রকাশ পায়।
একইভাবে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। এর অর্থ এই যে, প্রতিটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যেই মানবিকতা, মানবিকতা না থাকলে একজন মানুষ দেশের সুনাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে না। সমবায় সংগঠনের লাভ-ক্ষতির বিষয়ের চেয়ে পারস্পরিক সহমর্মিতা, ন্যায়নিষ্ঠা ও সম্মিলিত অগ্রগতির আকাঙ্ক্ষাই মূল প্রতিপাদ্য। সমবায়ের এই চেতনা যদি আমরা আমাদের কর্মে, চিন্তায় ও আচরণে ধারণ করতে পারি, তবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি আমরা সামাজিক ন্যায় ও মর্যাদার এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারব।
তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ৩০ বছরের কম বয়সী। ২০২৪ এর জুলাই গণ অভ্যুত্থান এর মাধ্যমে এই তরুণরাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তরুণরা তাদের আত্মপ্রত্যয় ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা দিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই তরুণ শক্তিকেই এখন আমাদের সমবায় আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে হবে। তরুণদের হতাশা ও বেকারত্বের অভিশাপ এই আন্দোলনে প্রতিফলিত হয়েছে। তরুণদের সম্পৃক্ত করে সমবায়ের মাধ্যমে এই দেশকে এগিয়ে নিতে এখনই পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। এই সুযোগ হাজার বছরেও আর আসবে না। সুতরাং এ বিষয়ে বিশেষ সবাইকে সচেষ্ট তে হবে।
তিনি বলেন, তরুণদের পাশাপাশি নারীদেরকেও অধিকমাত্রায় সমবায়ে সম্পৃক্ত করতে হবে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। সমবায়ের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা, কৃষক ও কারিগরদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা গেলে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি জাতীয় উৎপাদনও বাড়বে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় এর যুগ্মনিবান্দক মো. দুলাল মিয়া সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড.মো. জিয়াউদ্দিন, চট্টগ্রামের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. মোসলেহ উদ্দিন বক্তৃতা করেন।
